ভাগবাটোয়ারা ও দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রক্তক্ষয়ী রূপ নিচ্ছে। সারা দেশে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি ও হত্যার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আরিফ মির (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হন। গুলিতে আহত হন আরও একজন। স্থানীয়রা জানায়, ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্ব কে নেবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছিল। সোমবার সকালে বিষয়টি চরমে ওঠে এবং একপর্যায়ে দুই পক্ষ একে অপরের দিকে গুলি চালায়।
একইদিন রাজধানীর সূত্রাপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে। এর আগের দিন, রোববার (৯ নভেম্বর) ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলীয় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিকেলে গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায় সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ৬০ জন আহত হন। স্থানীয় সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়।
এরও আগে, গত বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার চালিতাতলী খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগের সময় গুলি হয়। এতে বিএনপির প্রার্থী প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। একই ঘটনায় ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) নিহত হন এবং আরও পাঁচজন আহত হন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা, আর্থিক লেনদেন ও মনোনয়নপ্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিভিন্ন জায়গায় এসব বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “বিএনপি এখন সংগঠনগত দুর্বলতার চরম সংকটে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে দলটির ভেতরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠেছে। স্থানীয় পর্যায়ে যেসব নেতা তৃণমূলকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের মধ্যে ‘ভাগবাটোয়ারা’ বা অর্থনৈতিক আধিপত্যের লড়াই এখন সরাসরি সংঘর্ষে পরিণত হচ্ছে।”
একাধিক স্থানে সংঘর্ষ, গুলি ও হত্যার ঘটনায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন উন্মুক্ত রূপ নিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কেবল দলটির সাংগঠনিক সংকটই নয়, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে উঠছে।

