বাংলাদেশে একের পর এক ঘটনার ধাক্কায় জনমনে প্রশ্ন জাগছে দেশের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? বিমানবন্দরে রহস্যজনক আগুন, বন্দরের বিদেশি দখল, গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা, পাসপোর্টের মানের অবনতি—সব মিলিয়ে আজ রাষ্ট্র যেন দিশেহারা। আর এই অস্থিরতার কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি নাম—ইউনুস প্রশাসন।
জাতির কাছে এক সময় যিনি উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও উদ্ভাবনের প্রতীক ছিলেন, সেই ইউনুস এখন নিজ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে দেশের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে তাঁর ‘বিশ্ব ভাবমূর্তি’ রক্ষার অজুহাতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো আজ অর্থনীতি ও প্রশাসন—উভয় ক্ষেত্রেই গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন লাগার ঘটনাকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে দেখাতে চাইলেও, তদন্তের অভাব ও তথ্য গোপনের অভিযোগে জনআস্থা ভেঙে পড়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সংরক্ষিত স্থানে আগুন লাগা মানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মারাত্মক ভাঙন। অথচ ঘটনার দায় কেউ নিচ্ছে না, বরং ধামাচাপার প্রবণতাই স্পষ্ট।
এরপর এসেছে দেশের সবচেয়ে কৌশলগত খাত—বন্দরব্যবস্থা। চুক্তি ও পরিচালনার নামে বিদেশি স্বার্থ এখন সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে দেশের প্রধান বন্দরগুলো। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল বলছে, এটি শুধু অর্থনৈতিক বিপর্যয় নয়; এটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে আঘাত। ইউনুস প্রশাসনের বিদেশমুখী নীতি এখন অনেকের কাছে “অর্থনৈতিক দখলদারির নরম সংস্করণ” বলে বিবেচিত হচ্ছে।
গার্মেন্টস শিল্প, যা দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি জোগান দেয়, সেখানে অঘোষিত ধস নেমেছে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়ছে, অথচ সরকার নিশ্চুপ। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, নীতিগত সহায়তার অভাব, প্রশাসনিক জটিলতা ও ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা শিল্পখাতকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
এক সময় বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট শক্ত অবস্থানে ছিল। কিন্তু এখন তা আন্তর্জাতিক সূচকে নেমে এসেছে ইতিহাসের তলানিতে। বিদেশে প্রবাসী শ্রমিকরা পড়ছেন বিপাকে, আর দেশের সাধারণ মানুষকে পাসপোর্ট করতে দালালচক্রের কাছে মাথা নত করতে হচ্ছে। অথচ সরকার ব্যস্ত বিদেশ সফরে, রাষ্ট্রীয় অর্থে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায়।
সবচেয়ে বড় বিস্ময়—গণমাধ্যমের নীরবতা। একের পর এক দুর্ঘটনা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, প্রশাসনিক অদক্ষতা—কিছুই যেন আলোচনায় আসছে না। নাগরিকরা বলছে, মিডিয়ার এই নীরবতা আসলে ভয় ও নির্ভরতার মিশ্র প্রতিচ্ছবি, যা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক সংকেত।
ইউনুস প্রশাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো—রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার। সরকারি কার্যক্রম, প্রচার ও নীতিনির্ধারণ—সব ক্ষেত্রেই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের প্রভাব দৃশ্যমান। এমনকি সরকারি তথ্যপ্রবাহও এখন ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে, যা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নীতির পরিপন্থী।
যে নেতৃত্ব একসময় আশার প্রতীক ছিল, সে এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। জনগণের আস্থা, প্রশাসনের পেশাদারিত্ব, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা—সবকিছু আজ সংকটে। রাষ্ট্রের স্থিতি এখন নির্ভর করছে এক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে, আর সেই সিদ্ধান্তগুলোই দেশের ভিত্তি কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের মানুষ আজ উত্তর খুঁজছে রাষ্ট্র কার জন্য? নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা কোথায়? এয়ারপোর্টে আগুন আর বন্দরে বিদেশি দখলের এই বাস্তবতা প্রমাণ করছে ইউনুস প্রশাসন হয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, নয়তো এক বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে। আর এই খেলায় হারছে একটাই সত্তা বাংলাদেশ।

