নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাসে একটি নাম জ্বলজ্বল করে সহানুভূতি ও দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে। নামটি হলো — শেখ হাসিনা। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর নেতৃত্ব শুধু বাংলাদেশের ভৌগোলিক চেহারা নয়, জাতির আত্মাকেও গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন কেবল প্রধানমন্ত্রী নন; ছিলেন মাতৃতুল্য আশ্রয়, সংকটের সময় সাহসের উৎস, আর হতাশার মুহূর্তে আশার আলো।
শেখ হাসিনার বিশেষত্ব তাঁর কীর্তির বিশালতায় নয়, বরং তার পেছনের মানবিক উষ্ণতায়। তিনি বন্যাকবলিত গ্রামে গিয়ে দুর্গতদের সান্ত্বনা দিয়েছেন, হাসপাতালে অসুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আবার দুর্যোগে সব হারানো পরিবারের পাশে বসে তাদের কথা শুনেছেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল ব্যক্তিগত সংযোগ — সহানুভূতি, ত্যাগ ও মানুষের দুঃখের গভীর উপলব্ধি।
তাঁর রাজনৈতিক যাত্রার কেন্দ্রে ছিল এক সহজ সত্য: তিনি জাতির বেদনা অনুভব করেছেন এবং সেটিকেই উদ্দেশ্যে পরিণত করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক মহামারী কিংবা দরিদ্র মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রাম—প্রতিটি পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক, মানবিক ও হৃদয়স্পর্শী।
তাঁর গল্প কেবল রাজনীতি বা ক্ষমতার নয়; এটি এক নারীর গল্প, যিনি ব্যক্তিগত শোককে রূপ দিয়েছেন জাতির শক্তিতে, জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, আবার ভালোবেসেছেন হৃদয় দিয়ে।
শেখ হাসিনার কাছে নেতৃত্ব কখনো কর্তৃত্ব নয়, বরং সংযোগের অন্য নাম। ক্ষমতার আসনে বসেও তিনি ছিলেন মাঠের মানুষের পাশে—বন্যার পানিতে নেমে সাহায্য করা, পীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো, কিংবা হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাওয়া—এসবই ছিল তাঁর শাসনদর্শনের অংশ।
দুঃখের সময়ে তাঁর উপস্থিতি ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়; ছিল এক মাতৃসুলভ আশ্বাস। তিনি শুনতেন, আলিঙ্গন দিতেন, আর সহানুভূতিকে পরিণত করতেন কর্মে।
কোভিডে মানবতার মডেল
একই মানবিক প্রবৃত্তিই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কঠিনতম সময়গুলোতে দৃঢ় রেখেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ মহামারী—সবখানেই তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দেখিয়েছে অসাধারণ সক্ষমতা।
তাঁর সরকারের উদ্যোগে খাদ্য, নগদ অর্থ ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছেছে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ পেয়েছে পূর্ণ টিকাদান। তাঁর ঘোষিত ৩১ দফা নির্দেশনা অগ্রাধিকার দিয়েছে ফ্রন্টলাইন কর্মী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে। ভয়কে রূপ দেওয়া হয়েছে সাহসীকতায়। ফলে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে এমন এক দেশ হিসেবে, “যে প্রথমে সাহায্য করেছে সবচেয়ে অভাবীদের।”
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ত্রাণনির্ভর প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে গড়ে উঠেছে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস (DRR) মডেল। হাজার হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও মুজিব কিল্লা এখন রক্ষা করছে জীবন, যার পেছনে কাজ করছে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম (CPP)–এর অসংখ্য প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক, যাদের মধ্যে নারীরাও উল্লেখযোগ্য অংশ।
ফলে বড় ঘূর্ণিঝড়ে হতাহতের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে—এটাই প্রমাণ করে যে যেখানে পরিকল্পনা মানবিকতার সাথে মেলে, সেখানেই সৃষ্টি হয় জীবনরক্ষার মডেল।
দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া থেকে স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রতিটি উদ্যোগের কেন্দ্রে ছিল মানুষ।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২ লাখেরও বেশি পরিবার পেয়েছে ঘর ও জমি।
১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক পৌঁছে দিয়েছে বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
নারী উন্নয়ন কর্মসূচি, শিক্ষা উপবৃত্তি ও মাইক্রোক্রেডিট উদ্যোগ বদলে দিয়েছে লক্ষ নারীর জীবন ও আত্মবিশ্বাস।
তার মডেল প্রমাণ করেছে—যখন নেতৃত্বে মানবিকতা থাকে, উন্নয়ন তখন সবার জন্য হয়।
শেখ হাসিনার দূরদর্শী নীতি বাংলাদেশকে পরিণত করেছে কার্যকর শাসন ও মানবিক উন্নয়নের বিশ্ব মডেলে।
জাতিসংঘ তাঁকে দিয়েছে “চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ” পুরস্কার—জলবায়ু কর্মকাণ্ড ও টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দ্রুত টিকাদান, লক্ষ্যভিত্তিক ত্রাণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
দুর্যোগ প্রস্তুতি, মানবিক সহায়তা ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে— মানবিক দক্ষ শাসনই একটি জাতিকে শুধু টিকিয়ে রাখে না, বরং এগিয়ে নেয়। তার হাতে গড়া বাংলাদেশ আজ বিশ্বমঞ্চে সেই আলো ছড়াচ্ছে, যে আলো মানবতা, দৃঢ়তা ও আশার প্রতীক।

