বাংলাদেশ একসময় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক বিস্ময় হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছিল। দারিদ্র্যপীড়িত, দুর্বল অবকাঠামোর দেশটি অল্প সময়েই উঠে দাঁড়িয়েছিল উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। এই অলৌকিক পরিবর্তনের স্থপতি ছিলেন শেখ হাসিনা—যিনি রাজনীতিতে শুধু নেতৃত্বই দেননি, অর্থনীতিতেও তৈরি করেছিলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
কিন্তু আজ, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে, সেই সাফল্যের গল্প যেন হারিয়ে যাচ্ছে বিশৃঙ্খলা, অদক্ষতা ও প্রতিহিংসার অন্ধকারে—যেখানে নেতৃত্বে আছেন কথিত “ইউনুস সরকার”।
শেখ হাসিনার উন্নয়নের স্বর্ণযুগ
২০০৯ থেকে ২০২৩—এই চৌদ্দ বছর ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের যুগ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল পরিকল্পিত, বাস্তবমুখী ও দীর্ঘমেয়াদি। প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬–৭ শতাংশে স্থিতিশীল হয়, দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে নেমে আসে ১৮ শতাংশে, মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২,৮০০ ডলার। বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনার প্রতীক”—এই উক্তিটি ছিল বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের নীতিনির্ধারকদের মুখে মুখে।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট—সবই ছিল একটি আত্মবিশ্বাসী রাষ্ট্রের প্রতীক।
নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতি—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ তখন ছিল “উন্নয়ন ও সুশাসনের সোনালি যুগে।”
ইউনুস সরকারের এক বছর, অদক্ষতা, অস্থিরতা ও আস্থাহীনতা
২০২৪ সালে রাজনৈতিক উত্থান–পতনের সুযোগে ক্ষমতায় আসে কথিত “ইউনুস সরকার”। প্রথমে অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো নতুন এক অর্থনৈতিক দর্শন দেখা যাবে। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেখা গেল, রাষ্ট্রযন্ত্র ভেঙে পড়ছে, বাজার হারাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন হারাচ্ছে দিকনির্দেশনা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে আসে, ব্যাংকিং খাতে ফেরে দুর্নীতি, বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ডলারের অস্থিরতা ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। চাল, ডাল, তেল—সবকিছুর দাম ছোঁয় আকাশ, অথচ কৃষক লোকসানে।
যেখানে শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল জনগণকেন্দ্রিক, সেখানে ইউনুসের শাসন প্রতিশোধনির্ভর”—বিশ্লেষকদের মন্তব্য এভাবেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। উৎপাদন খাত স্থবির, গার্মেন্টস অর্ডার কমেছে, নির্মাণ খাতে প্রকল্প বন্ধ। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে সংকট ক্রমে বাড়ছে। এমনকি সরকারি রাজস্ব আদায়েও দেখা দিয়েছে বড় ঘাটতি যা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করছে।
আন্তর্জাতিক আস্থার সংকট
শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকা ও এডিবির নির্ভরযোগ্য অংশীদার। কিন্তু এখন সেই আস্থা ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন সংস্থা একের পর এক প্রকল্প স্থগিত করছে, ঋণ কিস্তি আটকে দিচ্ছে, কারণ “নীতিগত স্থিতিশীলতা নেই”।
রেমিট্যান্সও কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। প্রবাসী আয়ে ভর করে থাকা অর্থনীতি এখন নড়বড়ে, নতুন অভিবাসন কমে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ী আস্থা সূচক নেমে এসেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
উন্নয়ন বনাম প্রতিশোধ
শেখ হাসিনা রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে। অন্যদিকে ইউনুস প্রশাসন ব্যস্ত ক্ষমতা ধরে রাখতে, বিরোধীদের দমন করতে এবং সমালোচকদের ভয় দেখাতে। ফলে অর্থনীতি হারিয়েছে “নীতিনির্ভর গতি”—এখন তা কেবল “ক্ষমতানির্ভর স্থবিরতা।”
জনগণ দেখছে, একসময়কার পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ ঢাকা পড়েছে বাজারে পেঁয়াজ-চালের দামে। যে দেশ আত্মনির্ভরতার পথে ছিল, আজ সেই দেশ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে কৌশলগত ব্যর্থতায়।
অর্থনীতি শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি নেতৃত্বের দর্শনের প্রতিফলন। শেখ হাসিনার অর্থনীতি ছিল আস্থা, পরিকল্পনা ও অগ্রগতির প্রতীক , আর ইউনুস সরকারের এক বছরের অর্থনীতি প্রতিফলিত করছে বিশৃঙ্খলা, অদক্ষতা ও ভয়ের রাজনীতি।
আজকের প্রশ্ন তাই একটাই বাংলাদেশ কি আবার ফিরে পাবে সেই আস্থার দিনগুলো, নাকি ইউনুসের ব্যর্থতার অন্ধকারে হারাবে এক দশকের অর্জন?
দেশের মানুষ উত্তর জানে, কারণ তারা দেখেছে কেমন হয় উন্নয়নের রাজনীতি, আর কেমন হয় প্রতিহিংসার অর্থনীতি। মানুষ উপলব্দি করছে আর বলছে “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার এদেশে বার বার দরকার।”

