Thursday, November 6, 2025

ভোট নিয়ে জালিয়াতির চেষ্টা, ইউএনডিপিকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-কে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে। ১ নভেম্বর ইউএনডিপির বাংলাদেশ রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলার বরাবর পাঠানো ১৮ পৃষ্ঠার এক চিঠিতে দলটি অভিযোগ করেছে, ইউএনডিপির ‘ব্যালট প্রজেক্ট (২০২৫–২৭)’ কার্যক্রম বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জাতিসংঘের নিরপেক্ষ নীতি লঙ্ঘন করছে। আওয়ামী লীগের দাবি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই “মুক্ত, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক” হতে পারে না, তাই ইউএনডিপির অর্থ ও কারিগরি সহায়তা “গণতন্ত্র দমনের বৈধতা” দেবে।

চিঠির শুরুতে আওয়ামী লীগ নিজেদের পরিচয় দিয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠাতা দল হিসেবে—১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির নজির স্থাপন করেছে। তবে বর্তমানে “রাজনৈতিক দমন, ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান ও লিবারেল মূল্যবোধের ক্ষয়” দেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

দল নিষিদ্ধ ও গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ
চিঠিতে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ মে ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, এবং নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এতে কোটি কোটি সমর্থকের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেবল ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ (ফেব্রুয়ারি ২০২৫) গ্রেপ্তার হন প্রায় ১১ হাজার জন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, বিচারপতি ও আমলা রয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে দলটি দাবি করেছে, অনেকের ওপর নির্যাতন ও চিকিৎসা বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে।

আইসিটি ও অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা
আওয়ামী লীগ চিঠিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পুনর্গঠনকেও “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত” বলে আখ্যা দিয়েছে। অভিযোগ করা হয়, নতুন চিফ প্রসিকিউটর একসময় যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন, ফলে ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।

দলটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে “অসাংবিধানিক” বলে অভিহিত করেছে। তাদের অভিযোগ, সরকার ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’–র অজুহাতে ক্ষমতা দখল করেছে, সংসদ বাতিল করে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা (‘জুলাই চার্টার’) করছে। নতুন নির্বাচনী আইনে জোটের দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকে ভোটে অংশ নিতে বাধ্য করা, ‘পলাতক আসামিদের’ অযোগ্য ঘোষণা, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানোর বিধান—এসবকেও “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উপকরণ” বলা হয়েছে।

ব্যালট প্রজেক্টে পক্ষপাতের অভিযোগ
চিঠিতে ইউএনডিপির ১৮০ মিলিয়ন ডলারের ‘ব্যালট প্রজেক্ট’-কে সবচেয়ে বিতর্কিত বলা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ২৮ মে সই হয়, যার লক্ষ্য স্বচ্ছ নির্বাচন, নারী অংশগ্রহণ ও ভোটার শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভিযোগ, দলটিকে নিষিদ্ধ করার পরেও ইউএনডিপি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা কার্যত “অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন ও একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান”। দলটির ভাষায়,

“এটা নিরপেক্ষতা নয়, এটি দমননীতিকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা।”
চিঠিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা (ইউডিএইচআর) ও নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর)-এর ধারা উদ্ধৃত করে বলা হয়, রাজনৈতিক মত প্রকাশের কারণে গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী।

দাবি ও আহ্বান
চিঠিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে— ১. ‘ব্যালট প্রজেক্ট’ অবিলম্বে স্থগিত করা। ২. সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি ও আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। ৩. জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ ও বিশেষ দূত পাঠানো। ৪. মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ মিশন গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করা। ৫. সব অধ্যাদেশ সংসদে অনুমোদনের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এবং এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব, মানবাধিকার কাউন্সিল, কমনওয়েলথ, আইপিইউসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে।

ইউএনডিপি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে এবং আগামী নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বৈশ্বিক বিতর্ক আরও তীব্র করবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-কে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে। ১ নভেম্বর ইউএনডিপির বাংলাদেশ রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলার বরাবর পাঠানো ১৮ পৃষ্ঠার এক চিঠিতে দলটি অভিযোগ করেছে, ইউএনডিপির ‘ব্যালট প্রজেক্ট (২০২৫–২৭)’ কার্যক্রম বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জাতিসংঘের নিরপেক্ষ নীতি লঙ্ঘন করছে। আওয়ামী লীগের দাবি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই “মুক্ত, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক” হতে পারে না, তাই ইউএনডিপির অর্থ ও কারিগরি সহায়তা “গণতন্ত্র দমনের বৈধতা” দেবে।

চিঠির শুরুতে আওয়ামী লীগ নিজেদের পরিচয় দিয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠাতা দল হিসেবে—১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির নজির স্থাপন করেছে। তবে বর্তমানে “রাজনৈতিক দমন, ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান ও লিবারেল মূল্যবোধের ক্ষয়” দেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

দল নিষিদ্ধ ও গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ
চিঠিতে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ মে ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, এবং নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এতে কোটি কোটি সমর্থকের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেবল ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ (ফেব্রুয়ারি ২০২৫) গ্রেপ্তার হন প্রায় ১১ হাজার জন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, বিচারপতি ও আমলা রয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে দলটি দাবি করেছে, অনেকের ওপর নির্যাতন ও চিকিৎসা বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে।

আইসিটি ও অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা
আওয়ামী লীগ চিঠিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পুনর্গঠনকেও “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত” বলে আখ্যা দিয়েছে। অভিযোগ করা হয়, নতুন চিফ প্রসিকিউটর একসময় যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন, ফলে ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।

দলটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে “অসাংবিধানিক” বলে অভিহিত করেছে। তাদের অভিযোগ, সরকার ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’–র অজুহাতে ক্ষমতা দখল করেছে, সংসদ বাতিল করে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা (‘জুলাই চার্টার’) করছে। নতুন নির্বাচনী আইনে জোটের দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকে ভোটে অংশ নিতে বাধ্য করা, ‘পলাতক আসামিদের’ অযোগ্য ঘোষণা, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানোর বিধান—এসবকেও “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উপকরণ” বলা হয়েছে।

ব্যালট প্রজেক্টে পক্ষপাতের অভিযোগ
চিঠিতে ইউএনডিপির ১৮০ মিলিয়ন ডলারের ‘ব্যালট প্রজেক্ট’-কে সবচেয়ে বিতর্কিত বলা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ২৮ মে সই হয়, যার লক্ষ্য স্বচ্ছ নির্বাচন, নারী অংশগ্রহণ ও ভোটার শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভিযোগ, দলটিকে নিষিদ্ধ করার পরেও ইউএনডিপি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা কার্যত “অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন ও একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান”। দলটির ভাষায়,

“এটা নিরপেক্ষতা নয়, এটি দমননীতিকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা।”
চিঠিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা (ইউডিএইচআর) ও নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর)-এর ধারা উদ্ধৃত করে বলা হয়, রাজনৈতিক মত প্রকাশের কারণে গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী।

দাবি ও আহ্বান
চিঠিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে— ১. ‘ব্যালট প্রজেক্ট’ অবিলম্বে স্থগিত করা। ২. সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি ও আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। ৩. জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ ও বিশেষ দূত পাঠানো। ৪. মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ মিশন গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করা। ৫. সব অধ্যাদেশ সংসদে অনুমোদনের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এবং এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব, মানবাধিকার কাউন্সিল, কমনওয়েলথ, আইপিইউসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে।

ইউএনডিপি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে এবং আগামী নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বৈশ্বিক বিতর্ক আরও তীব্র করবে।

আরো পড়ুন

সর্বশেষ