নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে ভয়াবহভাবে চলছে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর দমন-পীড়ন। রাস্তাঘাটে মিলছে অজ্ঞাত লাশ। এমনকি বাড়ির ভেতর ঢুকেই হত্যা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীদের। সেইসঙ্গে দেশে বেড়েই চলছে রাজনৈতিক সহিংসতা। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যক্রম শুরু হলেও এ নিয়ে তারা নীরব। তাদের পুরো চিন্তাই জুলাই কেন্দ্রিক যা পশ্চিমাদের সমর্থনে হয়েছিল।
ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় চলতি বছরের গত ১০ মাসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরইমধ্যে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, পুলিশের হাতে আটক কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপস্থিত করা হয়েছে যাদের শরীরে ছিল ব্যান্ডেজ। অর্থাৎ রিমান্ডে না নিয়েই তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।
এদিকে সিলেটে নিজ বাসা থেকে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই তদন্ত করছেন তারা।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) প্রকাশিত অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ ও কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবর মাসে ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৫২টি। এসব লাশের বেশির ভাগই নদী, রাস্তার পাশে, সেতুর নিচে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ১ শিশু, ১ কিশোর, ১১ নারী ও ৫৩ পুরুষ রয়েছেন। এমএসএফের মতে, এসব ঘটনা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ ছাড়া অক্টোবরে কারা হেফাজতে ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৮ জন। মৃতদের মধ্যে ৬ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতি। সব মৃত্যুই ঘটেছে কারাগারের বাইরে হাসপাতালে। এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশ ও হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধির ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নির্দেশ করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৯টি, এতে নিহত ২ ও আহত ৫৪৭ জন। একই মাসে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে ৪৪টি, এতে প্রাণ হারান ১২ জন। একই সঙ্গে দেশজুড়ে বেড়েছে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। এসব ঘটনার মাধ্যমে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানবাধিকার সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে এমএসএফ মনে করে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যখন রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ে এবং অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন এটি শুধু রাজনৈতিক সংঘাতের প্রকাশ নয়, বরং দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার কার্যকারিতার ওপরও প্রশ্ন তোলে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নীরব থাকলে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও বিচারপ্রাপ্তির ওপর আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

