নিজস্ব প্রতিবেদক
ইউনূসের চালে পড়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছিল বিএনপি। এখন দলটি দেয়ালে তাদের মাথা ঠুকছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপিকে মাইনাস করতেই ওই সনদে দলটিকে স্বাক্ষর করিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার পরও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের প্রস্তাব একপেশে, জবরদস্তিমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’–এর চূড়ান্ত কপিতে কিছু দফায় অগোচরে সংশোধন আনা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়া অন্য সব দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।
চার মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করার সক্ষমতা সরকারের আছে কি না, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, “১৪ মাসে সরকার তার ফিটনেস তৈরি করতে পারে নাই। হাতে সময় আছে মাত্র ৪ মাস। এই চার মাসে দুটো নির্বাচন করার মত সক্ষমতা সরকারের আছে?
এদিকে জামায়াতের ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘ইতিবাচকভাবে’ দেখছে। দলটি এখন এর বাস্তবায়নে অবিলম্বে আদেশ জারি এবং আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি জানান।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিএনপি মহসচিব প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ড. ইউনূস, আপনি জনগণের সামনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যেটুকু সংস্কার দরকার সেগুলো করে নির্বাচন দেবেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচানে যে সংসদ হবে সে সংসদ সেসব সংস্কার করবে। এর বাইরে গেলে, ব্যত্যয় হলে তার দায় দায়িত্ব বহন করতে হবে ড. ইউনূসের সরকারকে।
একই দিন হোটেল লেকশোরে এক সেমিনারে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ। অর্থাৎ এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বিএনপিও বুঝতে পারছে ভোট না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে করছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, জামায়াত, এনসিপিকে গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য দলের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তার এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় জামায়াত নেতা তাহেরের কথায়। তিনি বুধবার মগবাজারে দলের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ঠিক সময়ে না হলেও গণভোট আগে দিতে হবে।
সূত্র বলছে, ভোট নিয়ে সরকার গড়িমসি করলেও জুলাই সনদ নিয়ে ব্যাপক তৎপর। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।
অর্থাৎ তারা যেসব প্রস্তাব রেখে যাচ্ছে তা যে রাজনৈতিক দলই আসুক তারই মেনে চলতে হবে। কারণ এ গণভোট লোক দেখানো ভোট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলছেন, ইউনূসই নানাভাবে অপ্রাসঙ্গিক করে নির্বাচন বানচাল করাতে চাইছে। কখনও দেশকে অস্থিতিশীল করে আবার কখনও তার পছন্দের দল এনসিপিকে দিয়ে ঝামেলা তৈরি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি যদি একাট্টা না হয় তাহলে হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের ক্ষমা করবে না। তারাও জামায়াতের মতো বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে।

 
                                    