Friday, October 31, 2025

সবার হিসাবই মেলে, বাংলাদেশের হিসাবই শুধু মেলে না

জুলাই দাঙ্গার নামে একটি সুপরিকল্পিত ক্যু-এর মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ইউনূসের তথাকথিত সরকারের ১৪ মাস পূর্ণ হয়েছে। এই ১৪ মাসের হিসাব মিলাতে গেলে যা পাওয়া যায়, তা হলো একের পর এক ব্যর্থতা, অপশাসন আর জনগণের সঙ্গে প্রতারণার এক দীর্ঘ তালিকা। একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে বিদেশি প্রভুদের আশীর্বাদে, ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সহায়তায় এবং সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের কাছে জনগণের কল্যাণ আশা করাটাই বোকামি ছিল।

ইউনূস নিজে একজন সুদখোর মহাজন। গ্রামীণ ব্যাংকের নামে দরিদ্র নারীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা আদায় করে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু দেশের মানুষের কাছে তিনি কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটা তার রাজনৈতিক ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়। নিজে কখনো নির্বাচনে দাঁড়াননি, জনগণের ভোট চাননি। কারণ তিনি জানেন, জনগণ তাকে কখনো গ্রহণ করবে না।

এই অবৈধ শাসকের বিদেশ সফরের হিসাব দেখলে মাথা ঘুরে যায়। ১৪ মাসে ১৩টি দেশে ১৪ বার সফর। প্রতি মাসে একবার করে বিদেশ যাওয়া। দেশের ভেতরে যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, মানুষ কাজ হারাচ্ছে, তখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ব্যস্ত বিদেশ সফরে। রোমে মেয়রের অফিসে গিয়ে বসা, বহুপাক্ষিক সম্মেলনে অংশ নেওয়া – এসব কি সত্যিই এতটা জরুরি ছিল? দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এসব সফরের কোনো সুফল পাওয়া গেছে কি? উত্তর হলো না। বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্রমাগত ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

ক্ষমতায় আসার সময় ইউনূস বড় গলায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা স্পষ্ট অবস্থান নেবেন। কিন্তু ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো উপদেষ্টার সম্পদের হিসাব জনগণ দেখতে পায়নি। যে সরকার স্বচ্ছতার কথা বলে, যে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে, সেই সরকারই নিজেদের সম্পদের হিসাব দিতে ভয় পায়। এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে?

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এতটাই যে এখন মবসন্ত্রাস একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজবাড়ির গোয়ালন্দে একজন মানুষের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আর সরকার? সরকার পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে সব কিছু ঠিক আছে। জুলাই দাঙ্গার পর পুলিশ বাহিনী যখন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছিল, যখন তাদের মনোবল শূন্যের কোঠায়, তখন সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা কতটা সম্ভব ছিল? সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নিজেই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতির কিছুই হয়নি। পুলিশের মনোবল ফেরাতে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, সেটা নেওয়া হয়নি।

বিচার বিভাগের যে দুরবস্থা, তা দেখলে চোখে জল আসে। মবের চাপে হাইকোর্টের বিচারকদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বিভিন্ন মন্তব্যে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই বলছেন যে তারা দেখবেন গ্রেপ্তারকৃতরা যাতে জামিন না পায়। অর্থাৎ জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিচার বিভাগ নয়। আইনের শাসন বলে কিছু নেই, আছে শুধু জুলুমের শাসন।

তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাণ্ডকারখানা দেখলে বোঝা যায় এই সরকারের আসল চরিত্র কী। বিমানবন্দরে অস্ত্রের গুলি নিয়ে প্রবেশ, গভীর রাতে বিলাসবহুল হোটেলে আড্ডা, নিজের এলাকায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ – এসবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে যে প্রহসন হয়েছে, তা দেখে সবাই হতবাক। তামিম ইকবালের মতো খেলোয়াড় এবং বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তাদের নির্বাচন থেকে বাইরে রেখে একটি সাজানো নির্বাচন করা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনকে সম্পূর্ণ কলুষিত করে ফেলা হয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা আরো ভয়াবহ। ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, কাতার, ভিয়েতনাম, ওমান, কুয়েত, বাহরাইন – একের পর এক দেশ বাংলাদেশের পাসপোর্টে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান – সবাই ভিসা দিচ্ছে খুব সীমিত পরিসরে। এর চেয়ে বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা আর কী হতে পারে? প্রতিবেশী দেশ ভারত যখন ভিসা বন্ধ করে দেয়, তখন সারা বিশ্বে একটা খারাপ বার্তা যায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন তলানিতে।

পরিবেশ রক্ষার নামে যা হয়েছে, তা আরেক প্রহসন। দখলি জমি উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু পুরনো দখল তো উদ্ধার হয়নিই, বরং নতুন করে আরো দখল হয়েছে। ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে থাকলেও কোনো উদ্যোগ নেই। পান্থকুঞ্জ পার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। পলিথিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে, কিন্তু পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই।

সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা নিজেই তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে পড়ে মোটরসাইকেল চড়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ফরিদপুর-ভাঙা মহাসড়ক – কোথাও কোনো সংস্কার কাজ হচ্ছে না। বিগত সরকারের সময়ের উন্নয়নও এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে দুরবস্থা, তা বলে শেষ করা যাবে না। মোস্তাফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করার অপরাধে তিন সাংবাদিকের চাকরি চলে গেছে। মবসন্ত্রাসের ভয়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই সাংবাদিকদের বরখাস্ত করছে। জুলাই দাঙ্গায় খুন ও খুনের চেষ্টার মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬৬ জন সাংবাদিককে। তাদের মধ্যে ১৩ জন এখনো কারাগারে। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিজেই বলছেন, এটা গণমাধ্যমের জন্য অসম্মানের। মিডিয়ার শীর্ষ পদে এখন বিএনপি ও জামায়াতের লোক বসানো হয়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। নতুন বিনিয়োগ আসছে না, বরং প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি ক্রেতারা নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। তারা একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়, অবৈধ সরকারের সঙ্গে নয়।

এই অবৈধ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা চিঠি লিখে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বলেছে। কিন্তু পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, সরকার এসব মানবাধিকার সংস্থার কথা মানবে না। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘন করাটাই এখন সরকারি নীতি।

১৪ মাসের এই হিসাব দেখলে স্পষ্ট হয় যে এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এরা বিদেশি প্রভুদের সেবক। ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর দালাল। আর সামরিক বাহিনীর আশ্রিত। জুলাই দাঙ্গা ছিল একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বিদেশি টাকায়, জঙ্গিদের সহায়তায় এবং সামরিক বাহিনীর মদদে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। ক্ষমতায় বসানো হয়েছে একজন সুদখোর মহাজনকে, যার নিজের কোনো জনভিত্তি নেই, যার কোনো রাজনৈতিক দল নেই।

এই ১৪ মাসে যা হারিয়েছে বাংলাদেশ, তা ফিরিয়ে আনতে হয়তো আরো অনেক সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে না। আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি হয়েছে, বিচার বিভাগের যে স্বাধীনতা হারিয়েছে, গণমাধ্যমের যে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে – এসব কিছুর দাম দিতে হবে দেশকে, দিতে হবে জনগণকে। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে গণতন্ত্রের। একটি নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে যে নজির সৃষ্টি করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরো বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।

জুলাই দাঙ্গার নামে একটি সুপরিকল্পিত ক্যু-এর মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ইউনূসের তথাকথিত সরকারের ১৪ মাস পূর্ণ হয়েছে। এই ১৪ মাসের হিসাব মিলাতে গেলে যা পাওয়া যায়, তা হলো একের পর এক ব্যর্থতা, অপশাসন আর জনগণের সঙ্গে প্রতারণার এক দীর্ঘ তালিকা। একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে বিদেশি প্রভুদের আশীর্বাদে, ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সহায়তায় এবং সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের কাছে জনগণের কল্যাণ আশা করাটাই বোকামি ছিল।

ইউনূস নিজে একজন সুদখোর মহাজন। গ্রামীণ ব্যাংকের নামে দরিদ্র নারীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা আদায় করে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু দেশের মানুষের কাছে তিনি কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটা তার রাজনৈতিক ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়। নিজে কখনো নির্বাচনে দাঁড়াননি, জনগণের ভোট চাননি। কারণ তিনি জানেন, জনগণ তাকে কখনো গ্রহণ করবে না।

এই অবৈধ শাসকের বিদেশ সফরের হিসাব দেখলে মাথা ঘুরে যায়। ১৪ মাসে ১৩টি দেশে ১৪ বার সফর। প্রতি মাসে একবার করে বিদেশ যাওয়া। দেশের ভেতরে যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, মানুষ কাজ হারাচ্ছে, তখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ব্যস্ত বিদেশ সফরে। রোমে মেয়রের অফিসে গিয়ে বসা, বহুপাক্ষিক সম্মেলনে অংশ নেওয়া – এসব কি সত্যিই এতটা জরুরি ছিল? দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এসব সফরের কোনো সুফল পাওয়া গেছে কি? উত্তর হলো না। বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্রমাগত ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

ক্ষমতায় আসার সময় ইউনূস বড় গলায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা স্পষ্ট অবস্থান নেবেন। কিন্তু ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো উপদেষ্টার সম্পদের হিসাব জনগণ দেখতে পায়নি। যে সরকার স্বচ্ছতার কথা বলে, যে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে, সেই সরকারই নিজেদের সম্পদের হিসাব দিতে ভয় পায়। এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে?

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এতটাই যে এখন মবসন্ত্রাস একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজবাড়ির গোয়ালন্দে একজন মানুষের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আর সরকার? সরকার পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে সব কিছু ঠিক আছে। জুলাই দাঙ্গার পর পুলিশ বাহিনী যখন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছিল, যখন তাদের মনোবল শূন্যের কোঠায়, তখন সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা কতটা সম্ভব ছিল? সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নিজেই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতির কিছুই হয়নি। পুলিশের মনোবল ফেরাতে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, সেটা নেওয়া হয়নি।

বিচার বিভাগের যে দুরবস্থা, তা দেখলে চোখে জল আসে। মবের চাপে হাইকোর্টের বিচারকদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বিভিন্ন মন্তব্যে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই বলছেন যে তারা দেখবেন গ্রেপ্তারকৃতরা যাতে জামিন না পায়। অর্থাৎ জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিচার বিভাগ নয়। আইনের শাসন বলে কিছু নেই, আছে শুধু জুলুমের শাসন।

তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাণ্ডকারখানা দেখলে বোঝা যায় এই সরকারের আসল চরিত্র কী। বিমানবন্দরে অস্ত্রের গুলি নিয়ে প্রবেশ, গভীর রাতে বিলাসবহুল হোটেলে আড্ডা, নিজের এলাকায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ – এসবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে যে প্রহসন হয়েছে, তা দেখে সবাই হতবাক। তামিম ইকবালের মতো খেলোয়াড় এবং বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তাদের নির্বাচন থেকে বাইরে রেখে একটি সাজানো নির্বাচন করা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনকে সম্পূর্ণ কলুষিত করে ফেলা হয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা আরো ভয়াবহ। ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, কাতার, ভিয়েতনাম, ওমান, কুয়েত, বাহরাইন – একের পর এক দেশ বাংলাদেশের পাসপোর্টে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান – সবাই ভিসা দিচ্ছে খুব সীমিত পরিসরে। এর চেয়ে বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা আর কী হতে পারে? প্রতিবেশী দেশ ভারত যখন ভিসা বন্ধ করে দেয়, তখন সারা বিশ্বে একটা খারাপ বার্তা যায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন তলানিতে।

পরিবেশ রক্ষার নামে যা হয়েছে, তা আরেক প্রহসন। দখলি জমি উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু পুরনো দখল তো উদ্ধার হয়নিই, বরং নতুন করে আরো দখল হয়েছে। ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে থাকলেও কোনো উদ্যোগ নেই। পান্থকুঞ্জ পার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। পলিথিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে, কিন্তু পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই।

সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা নিজেই তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে পড়ে মোটরসাইকেল চড়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ফরিদপুর-ভাঙা মহাসড়ক – কোথাও কোনো সংস্কার কাজ হচ্ছে না। বিগত সরকারের সময়ের উন্নয়নও এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে দুরবস্থা, তা বলে শেষ করা যাবে না। মোস্তাফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করার অপরাধে তিন সাংবাদিকের চাকরি চলে গেছে। মবসন্ত্রাসের ভয়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই সাংবাদিকদের বরখাস্ত করছে। জুলাই দাঙ্গায় খুন ও খুনের চেষ্টার মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬৬ জন সাংবাদিককে। তাদের মধ্যে ১৩ জন এখনো কারাগারে। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিজেই বলছেন, এটা গণমাধ্যমের জন্য অসম্মানের। মিডিয়ার শীর্ষ পদে এখন বিএনপি ও জামায়াতের লোক বসানো হয়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। নতুন বিনিয়োগ আসছে না, বরং প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি ক্রেতারা নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। তারা একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়, অবৈধ সরকারের সঙ্গে নয়।

এই অবৈধ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা চিঠি লিখে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বলেছে। কিন্তু পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, সরকার এসব মানবাধিকার সংস্থার কথা মানবে না। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘন করাটাই এখন সরকারি নীতি।

১৪ মাসের এই হিসাব দেখলে স্পষ্ট হয় যে এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এরা বিদেশি প্রভুদের সেবক। ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর দালাল। আর সামরিক বাহিনীর আশ্রিত। জুলাই দাঙ্গা ছিল একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বিদেশি টাকায়, জঙ্গিদের সহায়তায় এবং সামরিক বাহিনীর মদদে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। ক্ষমতায় বসানো হয়েছে একজন সুদখোর মহাজনকে, যার নিজের কোনো জনভিত্তি নেই, যার কোনো রাজনৈতিক দল নেই।

এই ১৪ মাসে যা হারিয়েছে বাংলাদেশ, তা ফিরিয়ে আনতে হয়তো আরো অনেক সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে না। আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি হয়েছে, বিচার বিভাগের যে স্বাধীনতা হারিয়েছে, গণমাধ্যমের যে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে – এসব কিছুর দাম দিতে হবে দেশকে, দিতে হবে জনগণকে। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে গণতন্ত্রের। একটি নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে যে নজির সৃষ্টি করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরো বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।

আরো পড়ুন

সর্বশেষ