নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন মৃত্যুর মুখে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে দেশ অরাজকতা ও উগ্রবাদের গভীর খাদে তলিয়ে যাচ্ছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ ১৮-১৯ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার কারওয়ান বাজারে দেশের দুই শীর্ষ গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের অফিসে উন্মত্ত জনতার ভয়াবহ হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। এতে সাংবাদিকরা ধোঁয়ায় আটকে প্রাণভয়ে চিৎকার করেছেন, যন্ত্রপাতি ও নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে উভয় পত্রিকার প্রিন্ট ও অনলাইন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ—বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত ও অন্ধকার অধ্যায়। প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ এটাকে “সংবাদপত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার রাত” বলে অভিহিত করেছেন।
এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত দমনমূলক নীতির ফল। রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট অনুসারে, ড. ইউনুসের সরকারের প্রথম আট মাসে (আগস্ট ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫) ৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করা হয়েছে—পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় ২৩০% বেশি। পরবর্তীতে এ সংখ্যা আরও বেড়ে ৮৭৮-এ পৌঁছেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও হয়রানি শত শত ঘটনায় ঘটেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই দমনকে “গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত” বলে নিন্দা করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করে প্রগতিশীল সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও কারাবাস অব্যাহত।
এই অরাজকতার মূলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা। সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে ড. ইউনুস আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ অক্ষম প্রমাণিত হয়েছেন। উগ্রপন্থী গ্রুপগুলোকে ছাড় দেওয়ায় দেশ অরাজকতায় ডুবে যাচ্ছে। বিএনপি নেতারা এই হামলাকে নিন্দা করলেও সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভূমিকা, যিনি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে “মব” বা জনতার চাপ তৈরি করে সাংবাদিকদের হুমকির মুখে ফেলছেন। তিনি বারবার গণমাধ্যমকে “তথ্য বিকৃতি” ও “মিসকোটিং”-এর জন্য অভিযোগ করে জনতার মধ্যে মিডিয়া-বিরোধী মনোভাব উস্কে দিচ্ছেন। এমনকি তিনি প্রতিবাদকে “প্রেশার গ্রুপ” বলে জায়েজ করার চেষ্টা করেছেন, যা সরাসরি উগ্র হামলাকে উৎসাহিত করে। তার এই আচরণ গণমাধ্যমের “মব হুমকি”-র প্রধান উৎস এবং সরকারের দমনমূলক নীতির অংশ। ফলে সাংবাদিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ের মধ্যে কাজ করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনুসের সরকার মবক্র্যাসি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে দেশকে উগ্রবাদের ছায়ায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষজ্ঞরা এটাকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চরম ব্যর্থতার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়া ফ্রিডম সংস্থাগুলো এই হামলাকে তীব্র নিন্দা করে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের অস্তিত্ব বিপন্ন। প্রগতিশীল কণ্ঠস্বরগুলোকে স্তব্ধ করা হচ্ছে, সাংবাদিকরা হুমকি, হামলা ও দমনের শিকার। প্রেস সচিবের উস্কানি ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা যদি না থামানো হয়, তাহলে দেশ উগ্রবাদ ও অরাজকতার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সরকারের উপর কঠোর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সংস্কার, মিডিয়ার সুরক্ষা ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়।

