ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে এমন একটি তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে যেখানে আছে কোসোভো, কলম্বিয়া, মিসরের মতো দেশ। এই তালিকার অর্থ পরিষ্কার: বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের দাবি এখন থেকে সন্দেহের চোখে দেখা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর একটি দেশ কীভাবে এই পর্যায়ে এসে দাঁড়ালো? উত্তরটা খুঁজতে গেলে চলে আসে ২০২৪ সালের জুলাই মাস, যখন একটি সুপরিকল্পিত দাঙ্গার মাধ্যমে দেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল।
মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি নিজেকে দরিদ্রের বন্ধু বলে জাহির করেন, তিনি আসলে সুদের ব্যবসায়ী। গ্রামীণ ব্যাংকের নামে যিনি দেশের দরিদ্র মহিলাদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা আদায় করেছেন, সেই মানুষটিই এখন দেশ চালাচ্ছেন কোনো নির্বাচন ছাড়া, কোনো জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার, যার সামরিক সমর্থন ছাড়া এই অবৈধ শাসন একদিনও টিকে থাকতে পারত না।
জুলাই দাঙ্গার পেছনে যে বিদেশি অর্থায়ন ছিল, সেটা এখন আর গোপন কিছু নয়। ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলো যেভাবে সুসংগঠিতভাবে হামলা চালিয়েছিল, সরকারি ভবনে আগুন দিয়েছিল, পুলিশ হত্যা করেছিল, সেটা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল একটি সুপরিকল্পিত ক্যু, যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা। আর সেই ক্যুর সুবিধাভোগী হলেন ইউনুস, যিনি ক্ষমতায় বসেই শুরু করেছেন দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজ।
এখন ইউরোপ যখন বাংলাদেশিদের আশ্রয় দেওয়া কঠিন করে দিচ্ছে, তখন ইউনুসের চামচারা কী বলছেন? তারা বলছেন, আমরা ইউরোপে যাব না, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি হব। এই হাস্যকর দাবি শুনলে মনে হয় তারা কোন গ্রহে বাস করছেন। একটি দেশ যেখানে বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই, কর্মসংস্থান নেই, বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না, রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে, সেই দেশ হঠাৎ পরাশক্তি হয়ে যাবে কীভাবে? নাকি মডেল মসজিদ আর কওমি মাদ্রাসা দিয়ে অর্থনীতি চলবে?
ইউনুসের শাসনামলে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, সেটা ভয়াবহ। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে দেখছে একটি অস্থিতিশীল, সহিংস, মৌলবাদী দেশ হিসেবে। সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু মন্দির ভাঙচুর, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের ওপর হামলা, এসব খবর বিশ্বমিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে, শত শত মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনার পর কোন মুখে বলা যায় যে বাংলাদেশ নিরাপদ, গণতান্ত্রিক দেশ?
ইউরোপের এই সিদ্ধান্ত আসলে ইউনুস সরকারের ব্যর্থতার সার্টিফিকেট। যখন একটি দেশের নাগরিকদের আশ্রয়ের দাবি সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত করা হয়, তার মানে বিশ্ব মনে করছে সেই দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে মানুষ মিথ্যা দাবি করে হলেও পালিয়ে যেতে চাইবে। কিন্তু একই সাথে মনে করছে যে সেই দেশের সরকার এতটাই অবিশ্বস্ত যে তাদের দেওয়া কোনো তথ্য বিশ্বাস করা যায় না।
সেনাপ্রধান ওয়াকারের ভূমিকা এখানে বিশেষভাবে নিন্দনীয়। একজন সেনা কর্মকর্তা যার দায়িত্ব ছিল সংবিধান রক্ষা করা, তিনি নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করে একটি অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছেন। সামরিক বাহিনীকে তিনি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না।
ইউনুসের চামচারা যখন বলেন তারা ইউরোপ থেকে জনশক্তি আমদানি করবেন, তখন বুঝতে হবে তাদের বিভ্রম কতটা গভীর। ইউরোপীয় কেউ কেন আসবে একটি দেশে যেখানে আইনের শাসন নেই, নিরাপত্তা নেই, মৌলিক সুবিধা নেই? উল্টো বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকেরা দলে দলে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সবাই খুঁজছে বাইরে যাওয়ার পথ। কারণ তারা জানে, ইউনুসের বাংলাদেশে তাদের ভবিষ্যৎ নেই।
সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো, ইউনুস নিজে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পরিচিতি আছে। তবুও তিনি বাংলাদেশের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক সমর্থন আনতে পারেননি। উল্টো তার আমলে দেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এর কারণ সহজ: বিশ্ব জানে তিনি কীভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। কোনো গণতান্ত্রিক দেশই একটি সামরিক ক্যু সমর্থন করতে পারে না।
ইউরোপের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য যে বার্তা দিচ্ছে তা হলো, তোমরা যতদিন অবৈধ শাসনের অধীনে থাকবে, ততদিন তোমাদের বিশ্বাস করা হবে না। তোমাদের নাগরিকদের ইজ্জৎ দেয়া হবে না। তোমাদের পাসপোর্ট হবে সন্দেহের বস্তু। এটাই ইউনুস ও ওয়াকারের উপহার বাংলাদেশের জনগণের জন্য।

