সৌদি আরবে বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেপ্তারের খবরটি যতটা না আশ্চর্যজনক, তার চেয়ে বেশি প্রত্যাশিত। যে সরকার নিজেই অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, যাদের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দেওয়া হয়েছে রক্তাক্ত দাঙ্গা আর সহিংসতার মাধ্যমে, তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কিংবা কূটনৈতিক দক্ষতা আশা করাটাই বোকামি। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস যে সতর্কবার্তা জারি করেছে, তা কেবল একটি প্রশাসনিক ঘোষণা নয়, বরং এটি দেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর চরম ব্যর্থতার প্রতীক।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে যা ঘটেছিল, তাকে গণঅভ্যুত্থান বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলেও বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠিত দাঙ্গা, যেখানে বিদেশি অর্থায়ন ছিল, ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল, আর সামরিক বাহিনীর নীরব সমর্থন ছিল। একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে মুহাম্মদ ইউনূস নামের একজন ব্যক্তিকে, যার রাজনৈতিক কোনো ভিত্তি নেই, জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই। তার পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি আর জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো, যাদের ইতিহাস কলঙ্কিত, যাদের হাত রক্তে রঞ্জিত।
এখন সৌদি আরবে যা হচ্ছে, তা এই অবৈধ ক্ষমতা দখলের সরাসরি ফলাফল। একটি বৈধ সরকার থাকলে বিদেশে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান থাকত। কিন্তু যারা নিজেরাই অবৈধভাবে ক্ষমতায়, তারা কীভাবে অন্য দেশের কাছে নৈতিক অবস্থান থেকে কথা বলবে? সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করছে, আর ঢাকার শাসকরা শুধু সতর্কবার্তা জারি করতে পারছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?
যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত ছিল না, যাদের ক্ষমতায় আসার পেছনে ছিল সহিংসতা আর ষড়যন্ত্র, তাদের কাছ থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষার আশা করা অবাস্তব। ইউনূস সরকারের গঠন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, তার সবকিছুতেই স্পষ্ট যে এই সরকারের কোনো দিকনির্দেশনা নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই। যারা বিদেশি টাকায় ক্ষমতায় এসেছে, তারা বিদেশিদের স্বার্থই রক্ষা করবে, এটাই স্বাভাবিক।
বিএনপি আর জামায়াতের ভূমিকা এই পুরো প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত জঘন্য। দেশের ইতিহাসে এই দুটি দল বারবার প্রমাণ করেছে যে তারা ক্ষমতার জন্য যেকোনো পথ বেছে নিতে প্রস্তুত। জুলাইয়ের দাঙ্গায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল, তারা প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে সহিংসতাকে। এখন তারা ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে বসে আছে, অথচ দেশের মানুষের কোনো কল্যাণই করতে পারছে না। বিদেশে বাংলাদেশিরা অপমানিত হচ্ছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে, আর এই তথাকথিত সরকার নিরুপায়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় একটি অংশ কাজ করে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি টিকে আছে। কিন্তু সেই প্রবাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার মতো সক্ষমতা কি এই সরকারের আছে? যখন নিজের দেশেই আইনের শাসন নেই, যখন মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তখন বিদেশে কীভাবে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তারা?
ইউনূস সরকারের পুরো অস্তিত্বই একটি প্রহসন। একজন সুদী মহাজনকে দেশের শাসক বানানো হয়েছে, যার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, যার কোনো জনসমর্থন নেই। তার চারপাশে যারা আছে, তারা হয় ব্যর্থ রাজনীতিবিদ, নয়তো সুবিধাবাদী। এই সরকার টিকে আছে শুধুমাত্র বিদেশি প্রভুদের কৃপায় আর সামরিক সমর্থনে। জনগণের কোনো স্থান নেই তাদের হিসাবে।
যে সরকার নিজেই অবৈধ, সে সরকার কীভাবে অন্যদের কাছ থেকে বৈধতা আশা করে? সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা হয়তো তাদের আইন অনুযায়ী ঠিক। কিন্তু একটি শক্তিশালী, বৈধ সরকার থাকলে কূটনৈতিক চ্যানেলে এই বিষয়ে আলোচনা করা যেত, সমাধান খোঁজা যেত। কিন্তু এই সরকারের সেই নৈতিক শক্তি নেই।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, সাধারণ বাংলাদেশিরা এই রাজনৈতিক নাটকের শিকার হচ্ছে। যারা জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে গিয়েছে, তারা এখন নিজেদের দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার খেসারত দিচ্ছে। তাদের কোনো দোষ নেই, অথচ তাদেরই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির দায় সম্পূর্ণভাবে ইউনূস সরকার, বিএনপি, জামায়াত এবং যারা জুলাইয়ের সহিংসতাকে সমর্থন দিয়েছিল তাদের। তারা দেশকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশের ভেতরে যেমন অরাজকতা, বিদেশেও তেমনি মর্যাদাহানি। এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন একটি অস্থিতিশীল দেশ হিসেবে পরিচিত।
সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি বৃহত্তর সমস্যার লক্ষণ। যে সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তার পক্ষে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব নয়। ইউনূস, বিএনপি, জামায়াত এবং তাদের সমর্থকরা দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদের এই অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে শুধু সৌদি আরব নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এই দায় এড়াতে পারবে না কেউ।

