বিচার এখনো চলমান, আদালত এখনো রায় দেননি, তবু রায়ের খসড়া বাইরে ঘুরছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মাননীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গঠিত মামলার রায় নিয়ে দেশজুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সম্ভাব্য রায়ের ফল ফাঁসি এবং তার সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তথাকথিত “জুলাই যোদ্ধাদের” প্রদান এই তথ্য রায়ের আগেই ফাঁস হয়ে গেছে। বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এটি এক ভয়াবহ, নজিরবিহীন এবং বিপজ্জনক ঘটনা।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, রায়ের আগাম খবর ফাঁস হতেই জুলাই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রকাশ্যে উল্লাস করেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনন্দ মিছিল, হাস্যরস ও বিজয়োচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা। প্রশ্ন জাগে কীভাবে তারা আগেই জানল? কোন অদৃশ্য শক্তি তাদের খবর পৌঁছে দিল? আদালত কি এতটাই অরক্ষিত যে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় সন্ত্রাসীদের হাতে আগে পৌঁছে যায়, নাকি বিচারব্যবস্থা নিজেই কোনো রাজনৈতিক বা শক্তিশালী গোষ্ঠীর নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে?
এ ধরনের আগাম রায়ফাঁস শুধু আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেনি; এটি বিচারপ্রক্রিয়ার সুরক্ষা, গোপনীয়তা এবং নিরপেক্ষতার ওপর সরাসরি আঘাত। একটি রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্য রাখতে আদালতের প্রতিটি ধাপ কঠোর নিয়মে সম্পন্ন হওয়া উচিত। সেখানে রায়ের আগেই রায়ের ফল সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে যাওয়া স্পষ্ট প্রমাণ বিচার স্বাধীন নয়, আর ন্যায়বিচার কার্যত মৃত।
জুলাই সন্ত্রাসীদের আগাম উল্লাসই দেখিয়ে দেয়, বিচার নয়, রাজনৈতিক প্রতিশোধই এখন রায় নির্ধারণ করছে। এটি শুধু ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে না এটি রাষ্ট্রের বিচারপ্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা। রায়ের আগাম ফাঁস বিচারব্যবস্থাকে ভেঙে দেয় এবং রাষ্ট্রকে বিপজ্জনক, অগণতান্ত্রিক অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়।
এই ঘটনাপ্রবাহ রাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে যেখানে বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হয়ে যায়, সেখানে জনগণ আর আইনের আশ্রয় পায় না। বিচার যদি স্বাধীন না থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তিকেই আঘাত হানতে শুরু করে। হোক আদালত কতই না শক্তিশালী কাঠামোর, জনগণের আস্থা ছাড়া তা শূন্য। এবং এই আস্থা রক্ষাই হলো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

