বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার আগে। গত বছরের জুলাই মাসের দাঙ্গা ও সহিংসতার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অভিযোগ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে ছুঁয়ে গেছে। আদালতের রায় ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তে শেখ হাসিনা বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগগুলোকে স্পষ্টভাবে ‘ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাজানো এবং আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গড়া’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন।
“আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক নাটক হিসেবে সাজানো হয়েছিল। এগুলোকে আইনের কাঠামো থেকে বের করে এনে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে,” সাক্ষাৎকারে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই অভিযোগের মাধ্যমে জনগণের চোখে তার অবস্থান দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করছে, বর্তমান ইউনুস সরকার প্রকৃত অভিযুক্তদের আইনি দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা বিচার করা আইনানুযায়ী নিষিদ্ধ। ফলে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গঠিত মামলা “মিথ্যা ও মনগড়া” রূপ ধারণ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু অভিযোগ নয়—রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিপক্ষকে দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মিথ্যা মামলা, প্রমাণহীন অভিযোগ এবং মনগড়া রায় দেশের আইনের শাসনকে কলুষিত করতে পারে। তাদের ভাষায়, “যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা সরকার আইনকে নিজের ইচ্ছার জন্য ব্যবহার করে, তবে বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন বিপন্ন হয়।” বিশেষ করে, সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থা ও আইনের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জুলাই দাঙ্গার ঘটনা শুধু সহিংসতার ইতিহাস নয়; তা পরিণত হয়েছে রাজনীতির মাঠে নতুন নাটকের। আদালতের রায় ঘোষণার আগে দেশের মানুষ জাতিসংঘের মাধ্যমে অভিযোগের স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ তদন্ত চায়। তারা চাইছে, বিচার সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বচ্ছ হোক। জনমত বলছে, প্রকৃত সহিংসতার দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করা আবশ্যক, এবং মিথ্যা মামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়া উচিত নয়।
শেখ হাসিনা নিজেও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি সবসময় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার মাধ্যমে আমার অবস্থান দুর্বল করার চেষ্টা হয়েছে। সত্যিকার বিচারই সবশেষে সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করে।” এই বক্তব্যে উঠে এসেছে, তার রাজনৈতিক এবং নৈতিক দায়িত্ববোধ। তিনি শুধু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, দেশের সংবিধান, আইনের শাসন এবং জনগণের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিথ্যা মামলা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল হচ্ছে। জনগণ অনুভব করছে, শেখ হাসিনাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। দেশের বর্তমান অবৈধ সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে এবং দেশের উন্নয়ন, আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে।
এদিকে জনমতের এক জরিপ মতে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, দেশের স্বার্থে শেখ হাসিনার পুনঃপ্রবর্তন অপরিহার্য। তারা মনে করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পেরিয়ে যেতে পারে অবৈধ সরকারের চ্যালেঞ্জ, পুনঃস্থাপন করতে পারে গণতান্ত্রিক শাসন এবং চালু করতে পারে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন। জনমতের এই চাপ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দৃশ্যমান প্রতিধ্বনি তৈরি করছে।
শুধু রাজনৈতিক বিশ্লেষক নয়, সাধারণ মানুষও এই মিথ্যা মামলা ও পরিকল্পিত প্রতিহিংসার প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। তারা চাইছেন, দেশের বিচারব্যবস্থা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করুক। তারা মনে করছেন, আদালতের রায় কেবল একজন নেতার বিষয় নয় এটি দেশের আইন, সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে নির্ধারণ করবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলে, তবে তা আইনের শাসন, জনগণের আস্থা এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এ জন্য তারা পুনরাবৃত্তি সতর্কতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ দাবি করছেন।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে। শেখ হাসিনার স্পষ্ট অবস্থান তার সমর্থকদের কাছে দৃঢ়তার প্রতীক হলেও বিরোধীদের কাছে এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মিথ্যা মামলা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং দেশের আইন শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব এই তিনটি বিষয়ে চোখ রাখার মধ্যেই দাঁড়িয়ে আজ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নতুন অধ্যায় লিখতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা শুধু নিজেকে রক্ষা করছেন না; তিনি দেশের সংবিধান, জনগণের স্বার্থ এবং আইনের শাসন রক্ষার জন্য দাঁড়িয়েছেন। তার এই অবস্থানই প্রতিফলিত করছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ যে নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছে যে নেতৃত্ব দেশকে অবৈধ সরকারের চাপে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম।

