নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনকে কেন্দ্র করে যে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে, তার পেছনের নেপথ্যচিত্র এখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (IRI) দীর্ঘদিন ধরে দেশের অভ্যন্তরে এক প্রকার “প্রক্সি আন্দোলন” তৈরির কাজ চালিয়ে এসেছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে র্যাপ সংগীতশিল্পী, জাতিগত সংখ্যালঘু, এলজিবিটিকিউ কর্মী এমনকি “ট্রান্সজেন্ডার নৃত্য পরিবেশক” পর্যন্ত যুক্ত ছিল, যাদের সবাইকে বিরোধী রাজনীতির পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানো হয়।
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের দিনটিকে পশ্চিমা গণমাধ্যমে “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মুহূর্ত” হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল এক পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রকল্পের বাস্তবায়ন। হাসিনার সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়—এই অভিযোগের পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ বাড়তে থাকে। এখন ফাঁস হওয়া নথিগুলো প্রমাণ করছে, “মানবাধিকার” ও “গণতন্ত্রের” নামে বাংলাদেশের রাজনীতি অস্থিতিশীল করার জন্য মার্কিন অর্থায়ন ও কৌশলগত সহায়তা চলছিল বহুদিন ধরে।
IRI, যা রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে যুক্ত এবং ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (NED)–এর একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, অতীতেও বহু দেশের সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। এবার তাদের লক্ষ্য ছিল ঢাকা। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, শেখ হাসিনার পতনের আগে তারা কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে বিরোধী দলগুলোর প্রশিক্ষণ, ছাত্র আন্দোলনের নেটওয়ার্ক তৈরি এবং “সংস্কৃতি ও মানবাধিকার” নামে তথাকথিত স্বাধীন কর্মসূচি চালাতে।
এই ঘটনাগুলো শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর বিদেশি প্রভাবের প্রমাণ নয়—এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থের ওপর সরাসরি আঘাত। যখন বিদেশি সংস্থা রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য নেপথ্যে কাজ করে, তখন গণতন্ত্র আর জনগণের হাতে থাকে না—থেকে যায় পরাশক্তির কূটনৈতিক টেবিলে।
বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তা কোনো বিদেশি এজেন্ডার অংশ হতে পারে না। গণতন্ত্র মানে ভোট, নীতি ও জাতীয় মর্যাদার প্রতি জনগণের আনুগত্য—না যে, বিদেশি সংস্থার অর্থে সাজানো মঞ্চনাটক। আজ সময় এসেছে সত্য প্রকাশের, এবং প্রশ্ন তোলার—গণতন্ত্রের নামে নতুন উপনিবেশ কি গড়ে তোলা হচ্ছে?
দেশের নীতিনির্ধারক ও নাগরিক সমাজের উচিত এখনই এই বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া। নতুবা বাংলাদেশ আবারও এক নতুন ধরণের শাসনের অধীনে চলে যাবে—যেখানে সিদ্ধান্ত নেবে না ঢাকার ভোটার, বরং ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক ছায়া।

