নিজস্ব প্রতিবেদক
বড় কোনো শক্তি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। হঠাৎ করে আক্রমণ আসতে পারে।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনা মুখ ফসকে বলে দিয়েছেন ইউনূস। আমেরিকার মিশন সম্পন্ন না হওয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইলেকশন দিতে চায় না পশ্চিমা শক্তিরা। এ নির্দেশনাই পালন করছেন ইউনূস। ইউনূসের প্রিয় দল হলো জামায়াত। আর তার নিজের গড়া দল হলো এনসিপি। এ দুটোই মাঠে এখন নির্বাচন ভণ্ডুল করতে তৎপর। মাঝে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বুধবার সন্ধ্যায় (২৯ অক্টোবর) রংপুর নগরীর পর্যটন মেট্রোর হলরুমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে নির্বাচন কোনো কারণে পিছিয়ে গেলেও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন যেন না পেছায়, সে জন্য আগে গণভোট করার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
সূত্র বলছে, ভোট নিয়ে সরকার গড়িমসি করলেও জুলাই সনদ নিয়ে ব্যাপক তৎপর। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। অর্থাৎ তারা যেসব প্রস্তাব রেখে যাচ্ছে তা যে রাজনৈতিক দলই আসুক তারই মেনে চলতে হবে। কারণ এ গণভোট লোক দেখানো ভোট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলছেন, ইউনূসই নানাভাবে অপ্রাসঙ্গিক করে নির্বাচন বানচাল করাতে চাইছে। কখনও দেশকে অস্থিতিশীল করে আবার কখনও তার পছন্দের দল এনসিপিকে দিয়ে ঝামেলা তৈরি করে।
দেশে শিগগিরই একটি গৃহযুদ্ধ আভাস দিয়েছে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এরমধ্যে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের গুজব সেলের প্রধান দুই নেতা পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশে ঢাকায় অবস্থান করছে আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো জঙ্গিরা। টার্গেট নির্বাচন না হতে দেওয়া।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতের জন্য মুখিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এরমাধ্যমে তিনি নির্বাচন না হওয়া ও দেশে গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন মাহফুজ আলম।
মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন এবং আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
সূত্র বলছে, গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে নির্বাচন বানচালের ফাঁদ পেতেছে ইউনূসের সরকার। তিনি চাইছেন নির্বাচন বানচাল করে ক্ষমতা চালিয়ে যেতে। সেইসঙ্গে আমেরিকাকেও তাদের হিস্যা বুঝিয়ে দিতে। মূলত এনসিপি হলো অধ্যাপক ইউনূসের পেটোয়া বাহিনী। তাদের মাধ্যমেই সহিংস অন্দোলন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন ইউনূস। এবারও তাদেরকে দিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে নির্বাচন বানচালের ফাঁদ পেতেছে ইউনূসের সরকার। তিনি চাইছেন নির্বাচন বানচাল করে ক্ষমতা চালিয়ে যেতে। সেইসঙ্গে আমেরিকাকেও তাদের হিস্যা বুঝিয়ে দিতে।
এরইমধ্যে চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে আমেরিকার ষড়যন্ত্র চলছেই। বিশেষ করে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকার কাছে চট্টগ্রাম বন্দর ও সেন্টমার্টিন খুব শিগগিরই হস্তান্তর করতে যাচ্ছেন। সূত্র বলছে, এ সংক্রান্ত সব আনুষ্ঠানিকতা এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেছে।
এদিকে দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধাতে এবার তরুণ-তরুণীদের আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। টার্গেট একটাই, নির্বাচন বানচাল করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া লেখেন, দেশের ৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে মোট ৮ হাজার ৮৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের কারাতে, জুডো, তায়কোয়ান্ডো এবং আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এরইমধ্যে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জব্দ করেছে সেনাবাহিনী। সূত্র বলছে, জঙ্গিদের হাতে দিতে রাজশাহী থেকে এই অস্ত্রগুলো আনা হচ্ছিল। অপরদিকে দেশে একের পর এক ঘটছে অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা। এগুলো গৃহযুদ্ধ বাঁধাতে পরিকল্পিত নাশকতার অংশ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত রোববার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামের মুরাদপুর উড়ালসড়ক থেকে নাটবল্টু চুরির ঘটনায় নগরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ঝুঁকিতে রয়েছে। কদিন আগেই যমুনা নদীর তীরে নির্মিত সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে সোলার পাওয়ার প্লান্ট থেকে প্রায় কোটি টাকার তামার তারসহ আনুসাঙ্গিক মালামাল লুট করা হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত মওলানা ভাসানী সেতুর সড়কবাতির তার চুরির পর সেখানকার শতাধিক রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়েছে।
এদিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুনের ঘটনা ঘটে। কার্গো নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাওয়া ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে অনুমান করছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতারা। এ ঘটনায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ১৯ অক্টোবর ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে আগুন লাগে। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এর আগে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানায় আগুন লাগে, যা টানা ১৭ ঘণ্টা জ্বলার পর নিয়ন্ত্রণে আসে। একই দিন রাতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে একটি সূতার মিলে অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া, গত ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে একটি কেমিক্যাল গোডাউন এবং পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এই ঘটনায় ১৬ জন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে, সেগুলোকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে একের পর এক অস্ত্র উদ্ধার, অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ঘটছে—তাতে এটা স্পষ্ট যে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে কিছু শক্তি সমন্বিতভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

 
                                    