আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচন বাংলাদেশের বিভাজনের রাজনীতিকে আরও গভীর করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বুধবার বলেন, তাঁর দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা দেশে রাজনৈতিক বিভাজন আরও বাড়াবে। এই সাক্ষাৎকারে এএফপির প্রশ্নের প্রেক্ষিতে লিখিত উত্তর দেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎকার। এই সাক্ষাৎকারে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ‘আইনগত প্রহসন’ বলে অভিহিত করেন। তাঁর দাবি, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায় ‘পূর্বনির্ধারিত’।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে বাংলাদেশে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো এখন শেখ হাসিনার বিচারের কেন্দ্রে। ৭৮ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, “ভয়াবহ দিনগুলোতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য আমি শোক প্রকাশ করি।”
এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি ১৭ কোটি মানুষের দেশে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর করছে। আওয়ামী লীগসহ সব বড় দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “ইউনুসকেই আওয়ামী লীগকে পুনর্বহাল করতে হবে, যাতে জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
২০২৫ সালের মে মাসে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে “দমনমূলক পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করে। হাসিনা বলেন, “নির্বাচন মানে মতবাদের প্রতিযোগিতা। কোনো দলের নীতির সঙ্গে একমত না হলেই তাকে বাদ দেওয়া যায় না।”
একদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আবারও জনপ্রিয়তা অর্জন করছে বাংলাদেশে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলছে বিচার। ‘আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বিচারে অংশ নিচ্ছেন না শেখ হাসিনা’ এবং ‘তিনি ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংস অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন’- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এটি আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দ্বারা গঠিত একটি অগণতান্ত্রিক প্রশাসনের বিচার।”
তিনি বলেন, “দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, এই রায় পূর্বনির্ধারিত। আমি অবাক হইনি।” হাসিনা বলেন, তিনি কেবল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মতো নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দেবেন। তিনি দাবি করেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছি—এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত হয়তো কমান্ড চেইনে হয়েছে।”
প্রসিকিউশন পুলিশের যাচাইকৃত অডিও টেপ উপস্থাপন করেছে, যেখানে শেখ হাসিনা সরাসরি “প্রাণঘাতী অস্ত্র” ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়। হাসিনা বলেন, “রেকর্ডিংগুলো অপ্রাসঙ্গিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে পূর্ণ কথা নেই। তিনি আরও বলেন, তাঁর পতনের পর “অপারেশন ডেভিল হান্ট”-এর মাধ্যমে হাজার হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে “প্রতিশোধমূলক সহিংসতা” তদন্তের আবেদন করেছেন। ব্রিটিশ আইনজীবী স্টিভেন পাওলস এ প্রসঙ্গে বলেন, “নির্যাতন ও গণপিটুনির বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে, যার বিচার বাংলাদেশে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্নে হাসিনা বলেন, “আমার কাছে বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা অগ্রাধিকার পাবে সব সময়।

