নিজস্ব প্রতিবেদক
নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক এবং প্রখ্যাত নির্মাতা অনিমেষ আইচ তার মায়ের মৃত্যুর পর সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন—দেশের হাসপাতালগুলো ‘মেরে ফেলছে’ মানুষকে। সোমবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এই কথা লিখে তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থার ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর আগে রবিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার মা অঞ্জলি আইচ (অঞ্জু)।
অনিমেষ আইচ তার পোস্টে লিখেছেন, “এই দেশের ডাক্তারদের প্রতিভা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এত খারাপ। এ জন্য সামর্থ্য থাকলে দেশে কেউ চিকিৎসা করায় না। আমার মাকে মেরে ফেলল।” ওই পোস্টে একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, “৫ আগস্টের পর থেকে দেশের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান কোন কিছুরই নিরাপত্তা নেই। চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়ে মারা যাচ্ছে অগণিত মানুষ। অবৈধ ইউনূসের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।”
এই অভিযোগ শুধু ব্যক্তিগত শোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের স্বাস্থ্য খাতের সিস্টেমিক ব্যর্থতার একটি জ্বলন্ত প্রতিফলন। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত ইউনূস সরকারের ১৫ মাসের আমলে চিকিৎসা খাতে কোনো মৌলিক উন্নয়ন দেখা যায়নি। উল্টো অর্থনৈতিক অবনতি, ওষুধের দাম বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে সেবার চরম অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ওষুধের ঘাটতি, যন্ত্রপাতির অভাব এবং চিকিৎসকদের অদক্ষতার অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।
চিকিৎসা খাতের বর্তমান ছবি: অগণিত মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে আছে কী?
গত এক বছরে ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য রোগে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসার অভাবে। উদাহরণস্বরূপ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসিএইচ) ভুল চিকিৎসায় এক সাংবাদিকের মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অবহেলা এবং ওষুধের অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক ক্লিনিকে প্রসূতি মায়ের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে তদন্তের ঘোষণা দিতে বাধ্য করেছে।
সাম্প্রতি মাদারীপুরে এক রোগীর অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু এবং রংপুর মেডিকেল কলেজে অ্যানথ্রাক্স রোগীর চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু—এসব ঘটনা চিকিৎসা ব্যবস্থার ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থা তুলে ধরছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্বাস্থ্য বাজেট কমেছে এবং দুর্নীতি বেড়েছে।
ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও খাদে নেমেছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০% ছাড়িয়েছে, ডলারের দাম বেড়েছে এবং ওষুধ আমদানি ব্যাহত হয়েছে। ফলে, সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা ‘অধিকার’ থেকে ‘বিলাসিতা’ হয়ে উঠেছে। বিএনপির উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, “গত একবছরে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অবস্থা অবনতির দিকে। এ অবস্থায় চিকিৎসা খাতের অবনতি স্বাভাবিক।”
ইউনূসের ব্যর্থতা: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ
অনিমেষ আইচের পোস্টে ‘অবৈধ ইউনূসের ব্যর্থতা’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর গঠিত এই সরকার দেশকে ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ নিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ মাত্র ৪% এ নেমেছে, যা ইউনূসের ‘সামাজিক ব্যবসা’ মডেলের ব্যর্থতা প্রমাণ করে। ইউনূসের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “ইউনূসের সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন বিপুল প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্পষ্ট। ইউনূস সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতা জামাত-বিএনপি-বৈষম্যদেরও ব্যর্থতা। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশ চলবে না।”

