দোয়েল কণ্ঠ ডেস্ক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার মায়ের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, এই দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা হবে একটি প্রহসন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যদি একটি সর্বজনীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকবে।
তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। নির্বাচন অবশ্যই সর্বোপরি, মুক্ত ও নিরপেক্ষ হতে হবে। বর্তমানে যা ঘটছে, তা আমাদের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। এটি ন্যায়বিচারের ছদ্মবেশে কারচুপি।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এটি হবে গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথম নির্বাচন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার তিন দিন পর সরকারপ্রধান হন মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তার সরকার মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এবং বহু জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি।
সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)-সহ ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন ইউনূসের কাছে এক চিঠিতে আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানায়। তাদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা সংগঠন, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সীমিত করছে, এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে তিন দশক ধরে বসবাসরত জয় বলেন,“আওয়ামী লীগকে যথেষ্ট সময় না দিলে নির্বাচন জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন আমাদের কোনো নির্বাচনী প্রস্তুতির অনুমতি নেই। শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও নির্বাচন প্রহসনই হবে।”
১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে বর্তমানে ৫২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে দেশটি এক ক্রান্তিলগ্নে রয়েছে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে আরেকটি বড় দল জাতীয় পার্টি কার্যত নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। তাদের কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সমাবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। েরাজনীতিতে আবার ফিরে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। গত এক বছরে ইসলামপন্থী এই দলটি উল্লেখযোগ্যভাবে নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে এবং কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছে।
জয় বলেন, “বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে জঙ্গিরা লাভবান হবে। ইউনূস তাদের সমর্থন দিচ্ছেন এবং কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করছেন।”
জয় শেখ হাসিনার সরকারের “কিছু ভুল” স্বীকার করলেও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিক্ষোভে এক হাজার ৪০০ জন নিহত হওয়ার দাবি প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, ইউনূস সরকারের এক স্বাস্থ্য উপদেষ্টার তথ্য অনুযায়ী প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৮০০। সব মৃত্যুই দুঃখজনক, তবে তদন্ত হওয়া উচিত।
সজীব ওয়াজেদ জয় সমালোচনা করে বলেন, ইউনূস সরকার বিক্ষোভকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছে, অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চালাচ্ছে। যা তার ভাষায় “উইচ হান্ট ”।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছে। শেখ হাসিনা নিজে এই বিচারকে “ক্যাঙ্গারু আদালত” আখ্যা দিয়েছেন এবং আইনজীবী নিয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
জয় অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার সমর্থক এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বিনা জামিনে আটক, অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৫০০ আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত এবং ৩১ জন পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, “এই সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড নৃশংস। তিনি দাবি করেন, দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুরা এখন প্রধান টার্গেট। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

