নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রকল্পে ৩৮ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে খরচ ধরা হয়েছে ৪৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য এক লাখ ৩১ হাজার টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রশিক্ষণে এই অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তরুণদের নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ রেকর্ড হারে বেড়েছে। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নামে জমা হয়েছে প্রায় ৮,৯৭২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৩ গুণ বেশি।
২০২৩ সালের শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা ছিল ৩৯৬ কোটি টাকা, আর ২০২২ সালে ছিল ৮৭৬ কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার প্রবণতা হঠাৎ করে বাড়তে থাকে।
সূত্র জানায়, এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম, প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানসহ অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।
উপদেষ্টার কার্যালয়ে শতকোটি টাকার দুর্নীতি
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার তদবির বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি অনুসন্ধানী সাংবাদিক নাজমুস সাকিব প্রকাশিত এক ভিডিওতে জানা যায়, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ বদলির জন্য এক যুগ্ম সচিবের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন।
এছাড়া সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বিশেষ সহকারী (পিএ) আতিক মোর্শেদের আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে ১৫০ কোটি টাকা বেহাতের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি শেখ হাসিনার আমলে সত্যিই প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে থাকে, তবে তার পেছনে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত থাকার কথা।
সরকারি কাঠামোর ভেতর থেকে বৈধ চুক্তি বা বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো হলে তা অর্থ পাচার নয়। প্রশ্ন হলো, ইউনূস সরকারের আমলে এই বিপুল অর্থ কে বা কারা বিদেশে পাঠাল? কারণ, এই সময় দেশে রিজার্ভ বাড়েনি, বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্পও শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের ওপর মহলেই লুটপাট হয়েছে, যার টাকা পাচার হয়েছে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশে।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজের আপন বড় ভাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করেন এবং পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম ট্যাক্সি চালান। অথচ গত ৯ মাস ধরে একটি আন্তর্জাতিক বেনিয়া গোষ্ঠী থেকে মাহফুজের ‘কমিশনভিত্তিক হিস্যা’র অর্থ ওই ভাইয়ের নামে থাকা Commonwealth Bank of Australia-এর একটি একাউন্টে জমা হচ্ছিল।
মিডল ইস্ট থেকে গত ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে একটি সাড়ে ছয় কোটি টাকার লেনদেন AUSTRAC-এর নজরে আসে। অস্বাভাবিক এই আর্থিক কার্যক্রমের পর ব্যাংক একাউন্টটি অবরুদ্ধ করে দেয় সংস্থাটি, এবং তদন্তে নামে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থটি জন্মদেশে একটি প্রভাবশালী প্রজেক্টের ফাইল তদবির ও লবিংয়ের বিনিময়ে পাওয়া ‘কমিশন’।
ওপরে বর্ণিত পুরো দুর্নীতিনামাই কথিত ছাত্র উপদেষ্টাদের যারা রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে বিদেশি ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। আর তাদের উপদেষ্টা পরিষদেও তাদের জায়গা করে দেন আন্দোলনের হোতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব ছাত্রনেতা-উপদেষ্টা এখন ক্ষমতার কেন্দ্রে, তাদের অনেকে অতীতে আন্দোলনের নামে বিদেশি শক্তির ছত্রছায়ায় সামনে এসেছিল। আজ তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতির মহোৎসব চালাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, এ আন্দোলনের পেছনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নয়, ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্ষমতার লোভই প্রধান চালিকাশক্তি ছিল।

