সাম্প্রতিক জুলাই সনদ ঘোষণা ও স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের মাত্র ৩০% রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। বাকী ৭০% দলের অনুপস্থিতি তাত্ক্ষণিকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং দেশবাসীর মধ্যে সংবিধান ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি অনাস্থা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে।
তথাকথিত জুলাই সনদে বলা হয়েছে, এটি একটি নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। তবে এর আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখনও অস্পষ্ট। পর্যালোচকরা মনে করছেন, সনদ কার্যকর করতে সংবিধান ও সংসদের অনুমোদন অপরিহার্য; শুধুমাত্র স্বাক্ষর বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি দেশের আইনগত কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না।
স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, ১৮টি নিবন্ধিত দল এতে স্বাক্ষর করেছে। তবে কিছু দল “মতের অনৈক্য” বা নোট অব ডিসেন্ট প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে এনসিপি, সিপিবি এবং অন্যান্য কিছু দল সনদে স্বাক্ষর করেনি। এছাড়াও, নিবন্ধিত দলের বাইরে কিছু দলও স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে রাজনৈতিক একমতের ধারণা আংশিক হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবৈষম্য স্বাভাবিক। বিভিন্ন দলের আদর্শ, চিন্তাভাবনা এবং দেশের উন্নয়ন কৌশল ভিন্ন। যদি সব দল একমত হয়ে যায়, তাহলে রাজনৈতিক দলের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ কারণে রাজনৈতিক মতভিন্নতা গণতন্ত্রের একটি স্বাভাবিক অংশ হিসেবে দেখা উচিত।
এদিকে, সনদে নতুন মূলনীতির যোগ ও সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন বা নতুন যোগ করার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সংসদের অনুমোদন অপরিহার্য। শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের জোরে ঘোষিত নথি বা অধ্যাদেশ যথেষ্ট নয়। অধ্যাদেশ জারি হলেও এটি সীমিত সময়ের জন্য কার্যকর থাকে এবং পরবর্তী সংসদ বসলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
জুলাই সনদ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর নয়; এটি আইনি অস্পষ্টতা, রাজনৈতিক বিতর্ক এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের অনাস্থা উভয়ই প্রতিফলিত করছে। দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত কাঠামোর স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য এখন যথাযথ, স্বচ্ছ এবং সংসদসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। না হলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সংবিধানগত স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে।

