সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি মারা গেছেন। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে অরাজকতা ছড়িয়ে নির্বাচন বানচালের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী গোষ্ঠীর সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ফলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তায় ডুবে গেছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত হয়ে উঠেছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র একদিন পর ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের ব্যস্ত সড়কে দিনদুপুরে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির উপর নৃশংস গুলিবর্ষণ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলেও পরে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তিনি প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারেননি। হাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইনকিলাব মঞ্চের অফিসিয়াল পেইজ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
হাদির মৃত্যুর পরপরই ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে শাহবাগসহ সারাদেশে ব্লকেড ও অচল করার হুমকি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে শাহবাগে ব্যাপক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে, যা রাজধানীর যান চলাচলকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এর পেছনে সরাসরি জামায়াত-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের অভিযোগ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হত্যাকাণ্ড নির্বাচন বানচালের জন্য জামায়াতের সুপরিকল্পিত মিশনের অংশ। হামলার পরপরই ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জামায়াত-ঘনিষ্ঠ নেতা আবু সাদিক কায়েমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করা হয়: “ওসমান হাদিকে গুলি করা হলো। চাঁদাবাজ ও গ্যাংস্টারদের কবল থেকে ঢাকা সিটিকে মুক্ত করতে অচিরেই আমাদের অভ্যুত্থান শুরু হবে। রাজধানীর ছাত্র-জনতাকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।” এই পোস্টে হাদির সুস্থতা কামনার কোনো কথা না থেকে সরাসরি ‘অভ্যুত্থানের’ হুমকি দেওয়ায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় পোস্টে দায় চাপানো হয় বিএনপির উপর, যা আরও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক সূত্র দাবি করছে, হামলাকারী শ্যুটারের সঙ্গে সাদিক কায়েমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এবং পুরো ঘটনার পেছনে জামায়াতের সুপরিকল্পিত ভূমিকা রয়েছে। ঢাকা-৮ আসনটি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বছরে ৪৫০-৫৫০ কোটি টাকার চাঁদাবাজির অর্থনৈতিক প্রবাহ রয়েছে বলে অভিযোগ। জামায়াত এই এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য সাদিক কায়েমের মতো নেতাদের প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আনার চেষ্টা করছিল।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড জামায়াতের নির্বাচন বানচালের চূড়ান্ত কৌশল। তারা জানে, সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের অবস্থান দুর্বল। তাই অরাজকতা সৃষ্টি করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে নির্বাচন পিছিয়ে গেলে ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবে, যা জামায়াতের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে।”
আরেক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “জামায়াতের এই ষড়যন্ত্র শুধু একটি আসনের জন্য নয়, পুরো নির্বাচনী পরিবেশকে উত্তপ্ত করে সুষ্ঠু ভোটকে অসম্ভব করে তুলছে। হাদির মৃত্যুকে অজুহাত করে দেশ অচল করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং ড. ইউনুসকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখার পথ সুগম হচ্ছে।”
হাদির মৃত্যুর পর ইনকিলাব মঞ্চের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত দেশ অচল করে দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সাড়া না মেলায় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের এই ষড়যন্ত্র সফল হলে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার আরও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবে, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে গভীর সংকটে ফেলবে।

