শান্তিপ্রেমী বাংলাদেশিদের ওপর আরেকটি সংঘাত বা যুদ্ধ পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে—এমন অভিযোগ ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সমালোচকদের দাবি, শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠী—যাদের ‘ইউনূস গং’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে—এই পরিস্থিতিকে উসকে দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তান প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজছে এবং সে উদ্দেশ্যে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই নেপথ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
সমালোচকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের কিছু পরিচিত মুখ ও রাজনৈতিক সংগঠকরা। তাদের বক্তব্য ও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। স্বাধীনতার আনন্দঘন এই দিনে দেশ যখন উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই আইএসআইয়ের ‘প্রেস্ক্রিপশন’ অনুসরণ করে ভারতবিরোধী কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে । অভিযোগের তীর ছোড়া হয়েছে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম–এর দিকেও। বলা হচ্ছে, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এ ধরনের কর্মসূচি জাতীয় ঐক্যের বদলে বিভাজন আরও গভীর করতে পারে।
এরই মধ্যে সোমবার রাজধানীতে এক সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম–এর বক্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি ভারতের উদ্দেশে হুঁশিয়ারিমূলক ভাষায় বলেন, “আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরা কিন্তু লাশ নেব। অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ, অনেক ধৈর্য ধরা হয়েছে।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এ ধরনের বক্তব্য সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে।
একই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও এক ধাপ এগিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোকে আলাদা করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও আসন্ন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রকারীদের ভারত আশ্রয় দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই তিনি ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
ইতিহাস টেনে সমালোচকরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। মিত্রবাহিনীর যৌথ প্রতিরোধে পাকিস্তানি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। তাদের মতে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আবারও সেই পরাজিত শক্তির প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভর করার চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, জুলাই আন্দোলনের কিছু কুশীলবের বক্তব্য ও কর্মসূচি ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি ভারতের মতো একটি বড় রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে নাহিদ–হাসনাতদের মতো নেতারা হয়তো বিদেশি কোনো দূতাবাসে আশ্রয় নেবেন—যেমনটি জুলাই আন্দোলনের সময় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই সংঘাতের সবচেয়ে বড় মাশুল দিতে হবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে।
অন্যদিকে, ঐতিহাসিক বাস্তবতা তুলে ধরে বিশ্লেষকরা আরও বলেন, ভারত কখনোই বাংলাদেশকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে দেখেনি। বরং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও দুই দেশের সম্পর্ক বহু সময়েই বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়েছে। সে কারণে উসকানিমূলক বক্তব্য ও কর্মসূচি থেকে বিরত থেকে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

