জুলাই আন্দোলনের সময় শহীদ মিনারে বাজত দেশাত্নবোধক বিভিন্ন গান। এতে সাধারণ মানুষ অনেকেই হয়তো ধোঁকা খেয়েছেন। তার ভেবেছিল মুক্তিযুদ্ধের কোনো শক্তি এই আন্দোলন করছে। কিন্তু আদতে তা নয়। দেশবিরোধী জামায়াত ও ইউনূসের মেটিকুলাস পরিকল্পনায় তখন মানুষকে ধোঁকায় ফেলা হয়।
এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর চালানো হয় খড়গ। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নেতৃত্বে গ্রহণের পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। একাত্তরের বিরোধী এই শক্তি এখন উঠেপড়ে লেগেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো নিশ্চিহ্ন করতে। আর এর পেছনে নিশ্চুপ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন সেই দেশবিরোধী শক্তি আবারও মুক্তিযুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষকে ভোলাতে চাইছে। বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টা নামের দুর্নীতিবাজরা।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করা ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এ নিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, এই লড়াই সহজ নয়; তবে মতিউর রহমান, তারামন বিবি, নূর হোসেন, ফেলানী, আবরার ফাহাদ, আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের আত্মত্যাগের প্রেরণা নিয়ে আমি—এই পুনর্গঠন ও বিনির্মাণের লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। অর্থাৎ এখানেও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মতিউর রহমানের নামকে বেঁচে খেতে চাইছেন তিনি। সহযে বলতে গেলে ধোঁকা দিচ্ছে।
তবে এই আসিফরা ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক মাত্রা লাভ করছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ইতিহাসকে পুনর্লিখনের প্রচেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনাগুলো ধ্বংসের অভিযোগ তীব্র হচ্ছে।
গত ২৯ মে লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চে নির্মিত একটি অত্যন্ত মূল্যবান ম্যুরাল জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়। এই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার, ৭১-এর গণহত্যা, বিজয়ের উচ্ছ্বাস, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠসহ স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, জেলা প্রশাসন ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ম্যুরালটি “চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়” বলে সেটি ঢেকে দেয়। এরপর শ্রমিকদের মাধ্যমে ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় নিযুক্ত বিভিন্ন সংগঠন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা বলছেন, “আমাদের ইতিহাস ও বীরের স্মৃতি লালন করার পরিবর্তে তা ধ্বংস করা হচ্ছে; যা জাতীয় ঐক্যের জন্য হুমকি।”
এ ছাড়াও, দেশের অন্যান্য প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও অবমাননার খবর সাম্প্রতিককালে ক্রমশ বাড়ছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ৭৮ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনা গত বছরের ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে ঘটে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই দুরবস্থা সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতন সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
সর্বশেষ ২৭ মে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রাতের আঁধারে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের গোলাপবাগ বাজার গোহাটিতে অবস্থিত এই শহীদ মিনারটি দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাচীর ভাঙার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙার অভিযোগও ওঠেছে, যা দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সুরক্ষার বিষয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
সরকারের মদদে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বর্তমান সরকার যুদ্ধ অপরাধি এই গোষ্ঠীটিকে সমর্থন দিতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের” পর দেশের ক্ষমতাসীন মহলে ইতিহাস ও মূল্যবোধ পুনর্লিখনের চেষ্টা হচ্ছে, যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ও তাদের স্মৃতি বিপন্ন। যদি জনগণ তাদের ধোঁকায় আবারও পড়ে তাহলে দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিলীন হয়ে যেতে পারে।

