নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গত বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ইউনূস মুখে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে। সমালোচকদের অভিযোগ, এর পেছনে রয়েছে ইউনূস ও তার ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের কৌশলগত পরিকল্পনা।
সংকটের মুহূর্তে তিনি প্রধানত তিনটি রাজনৈতিক শক্তির দিকে ঝুঁকেন—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি চালিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। এনসিপির পক্ষে অংশ নেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এছাড়া ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বৈঠকে যোগ দেন।
সূত্রমতে, এই বৈঠক শুধু হামলার ঘটনা নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, ইউনূস এই তিন দলের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করতে চাইছেন, যাতে নির্বাচনের পর তিনি নিজে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন।
এই গুঞ্জনকে আরও উসকে দিয়েছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের পর তার মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে তিনি পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। সাহাবুদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে তিনি অপমানিত এবং অবহেলিত বোধ করছেন, যার কারণে তিনি পদ ছাড়তে আগ্রহী। এর পরপরই বিভিন্ন মহলে খবর ছড়িয়েছে যে, ইউনূস রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে পারেন। এমনকি গ্রামীণ ব্যাংকের একটি ফেসবুক পেজ থেকেও এ সংক্রান্ত বার্তা প্রচারিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে অস্থিরতা বজায় রাখলে পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি হতে পারে। সূত্রমতে, ইউনূস গোষ্ঠী পশ্চিমা নির্দেশনায় দেশকে সিরিয়া বা ইরাকের মতো অস্থির করে তুলতে চাইছে, যাতে মানবিক করিডোর, বন্দর এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে চীনের প্রভাব কমানোর কৌশলও কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও, রাজনৈতিক সংলাপে শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি দলকে প্রাধান্য দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিগত মাসগুলোতে তিনি বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন, যা সমঝোতার ইঙ্গিত বহন করছে। এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।

