Saturday, December 13, 2025

তফসিল ঘোষণার পরই জনরোষের পড়ার আশঙ্কায় ছাত্র উপদেষ্টারা, বাড়িতে বসেছে পাহারা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এরমধ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এক দুর্নীতিবাজ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। আর মাত্র দু মাস পরই ক্ষমতা ছাড়ার কথা তাদের। তবে এরইমধ্যে ইউনূসের ঘনিষ্ঠ ছাত্রউপদেষ্টারা আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে ছাত্র জনতা। চাইছে তাদের সম্পদের হিসাব।

বৃহস্পতিবার মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ের সামনে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে স্লোগান ও বিক্ষোভ করেছেন একদল মানুষ। নিজেদের ‘সাধারণ জনতা’ দাবি করে তাঁরা উপদেষ্টার দুর্নীতির তদন্ত দাবি করেন। এদিকে মুরাদনগরে আসিফ মাহমুদের সজীব ভূঁইয়ার বাড়িতে পাহারা বসেছে। আশঙ্কা রয়েছে, ক্ষমতা অপব্যবহার করায় যে কোনো সময় তার বাড়িতে লোকজন মব চালিয়ে হামলা করতে পারে।

এদিকে সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সম্পদের হিসাব প্রকাশের দাবি ‘দুর্নীতিবিরোধী ছাত্র জনতা’র।

সাবেক ছাত্রনেতা দীপক শীল বলেন, আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম এবং মাহফুজ আলম তারা আন্দোলন নিয়ে প্রতারণা করেছে। আমরা যদি দেখি নাহিদ ইসলামের কথাই ধরেন না সে তো নতুন দল করেছে তার ব্যাংকের একাউন্টে কয় টাকা দিয়ে দেখিয়েছিল যখন সে বিদায় নিয়েছিল আপনাদের। মনে আছে না আপনারা সাংবাদিক যারা তারাই তো নিউজ করেছিলেন ১০ হাজার টাকা। তার পার্টি কোটি টাকা খরচ করে ওই হোটেল ইন্টার কন্টেন্টারে ইফতার পার্টির আয়োজন করে সেই টাকার উৎস কি দুর্নীতি দমন কমিশন কী জানে ? আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমরা মনে করলাম ওটা কিংস পার্টি কিন্তু কিংস পার্টি হলেও টাকার উৎস তো আসলেই জানতে হবে । আজকে কোটি টাকার গাড়িতে সারজিস, নাসির পাটোয়ারিয়া ঘুরে বেড়ায়। আপনারা খবর নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলপড়ায় চায়ের দোকানে এখনো তাদের কাছে বিল পাওনা আছে আর আজকে তারা কোটিপতি তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আসলে কাজ কী?
ছাত্র উপদেষ্টাদের দুর্নীতির যত অভিযোগ

বাংলাদেশে বর্তমানে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। আর এর পেছনে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রেস সেক্রেটারির বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস করেছেন সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর। ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে তাকে টেন্ডারের কমিশন নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।

সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের দাবি, কথোপকথনটি অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সেক্রেটারি মাহফুজ আলমের। ফেসবুক পোস্টে জাওয়াদ নির্ঝর বলেন, ‘মাহফুজ আলমের (আসিফ মাহমুদের প্রেস সেক্রেটারি) সিডিআর মানে কললিস্ট নিয়ে কাজ করছিলাম। সে দুবাইয়ে রিয়েল স্টেট এবং বিনিয়োগ কম্পানিতে ফোন দেয়। আগেও এর ধান্দাবাজির অন্য অডিও ফাঁস হয়েছে।’

ফাঁস হওয়া অডিওতে মাহফুজ আলমকে এক ব্যক্তির সঙ্গে টেন্ডার নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। কথার এক পর্যায়ে ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি ৩ পার্সেন্ট কমিশন দেওয়ার কথা বলেন।

তখন মাহফুজ আলম বলেন, ‘কাজ কনফার্ম করে দিলে ৩ পার্সেন্ট, এটা হইলো। এখন কিছু কাজ চলতেছে, যেগুলো আমি সিক্স পার্সেন্টে করেছি আপনি খোঁজ নেন। ওয়ান পার্সেন্ট মিডলম্যান এবং ফাইভ পার্সেন্ট মিনিস্ট্রির জন্য। এগুলো ফিক্সড থাকে।’

একের পর এক বিতর্ক, অভিযোগ আর সমালোচনায় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি-মোট কথা ক্ষমতায় থেকে প্রায় সবধরনের অপকর্মই করেই যাচ্ছেন তিনি। এগুলো প্রমাণিতও হচ্ছে। তবে এর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক আমার দেশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সব উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ রাসেলের নামে এই স্থাপনা বানাতে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটির পেছনে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫১ লাখ টাকা।

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সব উপদেষ্টার আপত্তি সত্ত্বেও প্রকল্পটি পাস করিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আর এই প্রকল্পটির এখনকার ব্যয় ১৪ কোটি টাকা।

বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় একনেক সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ব্যয় বেশি হওয়ায় সব উপদেষ্টাই প্রকল্পটি অনুমোদনের বিপক্ষে ছিলেন, কিন্তু উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একক অনুরোধ ও জোর প্রচেষ্টায় এটি অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া একার সিদ্ধান্তে সরকারের একটি প্রকল্প থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে নিয়েছে।’

তিনি বলেছেন, তাকে নিয়ে কাহিনির যেন শেষ নেই। একের পর এক গুরুতর অভিযোগ, নানা ধরনের গল্প আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হচ্ছে। আর নির্দ্বিধায় এটুকু বলা যায়, তার বিরুদ্ধে আরো নানা ধরনের অভিযোগ আমাদের সামনে আসবে। এটুকু চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরস, আলোচনা, সমালোচনা কিংবা ট্রলের ঘটনা ঘটে চলেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা বা বেতন-ভাতার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জানে আলম অপু সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায়আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। সেই অভিযোগের ব্যাপারে সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। যেখানে রাতের খাবার খেতে মাঝে-মধ্যে ঢাকায় পূর্বাচলের তিনশ ফিট সংলগ্ন নীলা মার্কেটে অথবা গুলশান এলাকার অভিজাত ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার কথা বলেন সজীব ভুঁইয়া।

উপদেষ্টা আসিফের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির, টেন্ডার–বাণিজ্যসহ অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে অভিযোগের বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন হওয়ায় তার বিদেশ যাওয়া এবং এনআইডি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করা হয়েছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমে ১৭ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা হওয়ার পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মোয়াজ্জেমকে সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আসিফ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা তাদের ব্যক্তিগত সহকারী বা এপিএসের মাধ্যমেই তাদের দুর্নীতিগুলো করে থাকেন। যাতে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। আসিফ ও তার বন্ধু মোয়াজ্জেমকে দিয়েই কাজটি করিয়েছেন। ধরা পড়ার শঙ্কায় পরে তাকে বলির পাঠা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কিছু দিন আগেই তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজের আপন বড় ভাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করেন এবং পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম ট্যাক্সি চালান। অথচ গত ৯ মাস ধরে একটি আন্তর্জাতিক বেনিয়া গোষ্ঠী থেকে মাহফুজের ‘কমিশনভিত্তিক হিস্যা’র অর্থ ওই ভাইয়ের নামে থাকা Commonwealth Bank of Australia-এর একটি একাউন্টে জমা হচ্ছিল।

মিডল ইস্ট থেকে গত ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে একটি সাড়ে ছয় কোটি টাকার লেনদেন AUSTRAC-এর নজরে আসে। অস্বাভাবিক এই আর্থিক কার্যক্রমের পর ব্যাংক একাউন্টটি অবরুদ্ধ করে দেয় সংস্থাটি, এবং তদন্তে নামে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থটি জন্মদেশে একটি প্রভাবশালী প্রজেক্টের ফাইল তদবির ও লবিংয়ের বিনিময়ে পাওয়া ‘কমিশন’।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সাবেক পিএর বিরুদ্ধে ১৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মোবাইল ব্যাংকিং নগদের ১৫০ কোটি টাকা বেহাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নগদের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্ত্রীসহ আত্মীয়দের চাকরি দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

ওপরে বর্ণিত পুরো দুর্নীতিনামাই তথাকথিত ছাত্র উপদেষ্টাদের। যারা রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে বিদেশি ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা দূতাবাসে যাওয়া ও সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক তারই প্রমাণ দেন। গত বছরের ৮ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদেও তাদের জায়গা করে দেন আন্দোলনের হোতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব ছাত্রনেতা-উপদেষ্টা এখন ক্ষমতার কেন্দ্রে, তাদের অনেকে অতীতে আন্দোলনের নামে বিদেশি শক্তির ছত্রছায়ায় সামনে এসেছিল। আজ তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতির মহোৎসব চালাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, এ আন্দোলনের পেছনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নয়, ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্ষমতার লোভই প্রধান চালিকাশক্তি ছিল।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এরমধ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এক দুর্নীতিবাজ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। আর মাত্র দু মাস পরই ক্ষমতা ছাড়ার কথা তাদের। তবে এরইমধ্যে ইউনূসের ঘনিষ্ঠ ছাত্রউপদেষ্টারা আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে ছাত্র জনতা। চাইছে তাদের সম্পদের হিসাব।

বৃহস্পতিবার মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ের সামনে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে স্লোগান ও বিক্ষোভ করেছেন একদল মানুষ। নিজেদের ‘সাধারণ জনতা’ দাবি করে তাঁরা উপদেষ্টার দুর্নীতির তদন্ত দাবি করেন। এদিকে মুরাদনগরে আসিফ মাহমুদের সজীব ভূঁইয়ার বাড়িতে পাহারা বসেছে। আশঙ্কা রয়েছে, ক্ষমতা অপব্যবহার করায় যে কোনো সময় তার বাড়িতে লোকজন মব চালিয়ে হামলা করতে পারে।

এদিকে সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সম্পদের হিসাব প্রকাশের দাবি ‘দুর্নীতিবিরোধী ছাত্র জনতা’র।

সাবেক ছাত্রনেতা দীপক শীল বলেন, আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম এবং মাহফুজ আলম তারা আন্দোলন নিয়ে প্রতারণা করেছে। আমরা যদি দেখি নাহিদ ইসলামের কথাই ধরেন না সে তো নতুন দল করেছে তার ব্যাংকের একাউন্টে কয় টাকা দিয়ে দেখিয়েছিল যখন সে বিদায় নিয়েছিল আপনাদের। মনে আছে না আপনারা সাংবাদিক যারা তারাই তো নিউজ করেছিলেন ১০ হাজার টাকা। তার পার্টি কোটি টাকা খরচ করে ওই হোটেল ইন্টার কন্টেন্টারে ইফতার পার্টির আয়োজন করে সেই টাকার উৎস কি দুর্নীতি দমন কমিশন কী জানে ? আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমরা মনে করলাম ওটা কিংস পার্টি কিন্তু কিংস পার্টি হলেও টাকার উৎস তো আসলেই জানতে হবে । আজকে কোটি টাকার গাড়িতে সারজিস, নাসির পাটোয়ারিয়া ঘুরে বেড়ায়। আপনারা খবর নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলপড়ায় চায়ের দোকানে এখনো তাদের কাছে বিল পাওনা আছে আর আজকে তারা কোটিপতি তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আসলে কাজ কী?
ছাত্র উপদেষ্টাদের দুর্নীতির যত অভিযোগ

বাংলাদেশে বর্তমানে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। আর এর পেছনে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রেস সেক্রেটারির বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস করেছেন সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর। ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে তাকে টেন্ডারের কমিশন নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।

সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের দাবি, কথোপকথনটি অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সেক্রেটারি মাহফুজ আলমের। ফেসবুক পোস্টে জাওয়াদ নির্ঝর বলেন, ‘মাহফুজ আলমের (আসিফ মাহমুদের প্রেস সেক্রেটারি) সিডিআর মানে কললিস্ট নিয়ে কাজ করছিলাম। সে দুবাইয়ে রিয়েল স্টেট এবং বিনিয়োগ কম্পানিতে ফোন দেয়। আগেও এর ধান্দাবাজির অন্য অডিও ফাঁস হয়েছে।’

ফাঁস হওয়া অডিওতে মাহফুজ আলমকে এক ব্যক্তির সঙ্গে টেন্ডার নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। কথার এক পর্যায়ে ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি ৩ পার্সেন্ট কমিশন দেওয়ার কথা বলেন।

তখন মাহফুজ আলম বলেন, ‘কাজ কনফার্ম করে দিলে ৩ পার্সেন্ট, এটা হইলো। এখন কিছু কাজ চলতেছে, যেগুলো আমি সিক্স পার্সেন্টে করেছি আপনি খোঁজ নেন। ওয়ান পার্সেন্ট মিডলম্যান এবং ফাইভ পার্সেন্ট মিনিস্ট্রির জন্য। এগুলো ফিক্সড থাকে।’

একের পর এক বিতর্ক, অভিযোগ আর সমালোচনায় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি-মোট কথা ক্ষমতায় থেকে প্রায় সবধরনের অপকর্মই করেই যাচ্ছেন তিনি। এগুলো প্রমাণিতও হচ্ছে। তবে এর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক আমার দেশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সব উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ রাসেলের নামে এই স্থাপনা বানাতে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটির পেছনে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫১ লাখ টাকা।

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সব উপদেষ্টার আপত্তি সত্ত্বেও প্রকল্পটি পাস করিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আর এই প্রকল্পটির এখনকার ব্যয় ১৪ কোটি টাকা।

বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় একনেক সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ব্যয় বেশি হওয়ায় সব উপদেষ্টাই প্রকল্পটি অনুমোদনের বিপক্ষে ছিলেন, কিন্তু উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একক অনুরোধ ও জোর প্রচেষ্টায় এটি অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া একার সিদ্ধান্তে সরকারের একটি প্রকল্প থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে নিয়েছে।’

তিনি বলেছেন, তাকে নিয়ে কাহিনির যেন শেষ নেই। একের পর এক গুরুতর অভিযোগ, নানা ধরনের গল্প আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হচ্ছে। আর নির্দ্বিধায় এটুকু বলা যায়, তার বিরুদ্ধে আরো নানা ধরনের অভিযোগ আমাদের সামনে আসবে। এটুকু চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরস, আলোচনা, সমালোচনা কিংবা ট্রলের ঘটনা ঘটে চলেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা বা বেতন-ভাতার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জানে আলম অপু সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায়আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। সেই অভিযোগের ব্যাপারে সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। যেখানে রাতের খাবার খেতে মাঝে-মধ্যে ঢাকায় পূর্বাচলের তিনশ ফিট সংলগ্ন নীলা মার্কেটে অথবা গুলশান এলাকার অভিজাত ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার কথা বলেন সজীব ভুঁইয়া।

উপদেষ্টা আসিফের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির, টেন্ডার–বাণিজ্যসহ অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে অভিযোগের বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন হওয়ায় তার বিদেশ যাওয়া এবং এনআইডি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করা হয়েছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমে ১৭ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা হওয়ার পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মোয়াজ্জেমকে সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আসিফ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা তাদের ব্যক্তিগত সহকারী বা এপিএসের মাধ্যমেই তাদের দুর্নীতিগুলো করে থাকেন। যাতে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। আসিফ ও তার বন্ধু মোয়াজ্জেমকে দিয়েই কাজটি করিয়েছেন। ধরা পড়ার শঙ্কায় পরে তাকে বলির পাঠা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কিছু দিন আগেই তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজের আপন বড় ভাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করেন এবং পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম ট্যাক্সি চালান। অথচ গত ৯ মাস ধরে একটি আন্তর্জাতিক বেনিয়া গোষ্ঠী থেকে মাহফুজের ‘কমিশনভিত্তিক হিস্যা’র অর্থ ওই ভাইয়ের নামে থাকা Commonwealth Bank of Australia-এর একটি একাউন্টে জমা হচ্ছিল।

মিডল ইস্ট থেকে গত ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে একটি সাড়ে ছয় কোটি টাকার লেনদেন AUSTRAC-এর নজরে আসে। অস্বাভাবিক এই আর্থিক কার্যক্রমের পর ব্যাংক একাউন্টটি অবরুদ্ধ করে দেয় সংস্থাটি, এবং তদন্তে নামে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থটি জন্মদেশে একটি প্রভাবশালী প্রজেক্টের ফাইল তদবির ও লবিংয়ের বিনিময়ে পাওয়া ‘কমিশন’।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সাবেক পিএর বিরুদ্ধে ১৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মোবাইল ব্যাংকিং নগদের ১৫০ কোটি টাকা বেহাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নগদের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্ত্রীসহ আত্মীয়দের চাকরি দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

ওপরে বর্ণিত পুরো দুর্নীতিনামাই তথাকথিত ছাত্র উপদেষ্টাদের। যারা রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে বিদেশি ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা দূতাবাসে যাওয়া ও সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক তারই প্রমাণ দেন। গত বছরের ৮ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদেও তাদের জায়গা করে দেন আন্দোলনের হোতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব ছাত্রনেতা-উপদেষ্টা এখন ক্ষমতার কেন্দ্রে, তাদের অনেকে অতীতে আন্দোলনের নামে বিদেশি শক্তির ছত্রছায়ায় সামনে এসেছিল। আজ তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতির মহোৎসব চালাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, এ আন্দোলনের পেছনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নয়, ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্ষমতার লোভই প্রধান চালিকাশক্তি ছিল।

আরো পড়ুন

সর্বশেষ