যে সরকার নিজেই অবৈধ পথে ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকারের আমলে কারাগারে আইনের শাসন থাকবে এটা আশা করাটাই বোকামি। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রক্তাক্ত দাঙ্গা বাঁধিয়ে, বিদেশি টাকায় পুষ্ট জঙ্গিদের মাঠে নামিয়ে এবং সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কাছ থেকে কারাগারে শৃঙ্খলা প্রত্যাশা করা যায় না। মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কারাগারে যা ঘটছে, তা কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত নৈরাজ্য।
পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দীরা ৩৬০টিরও বেশি মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করছে। কারাগারের ভেতর বসেই তারা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস এবং এমনকি হত্যার হুমকি দিচ্ছে। একজন বন্দী তার মামলার বাদীকে ফোনে হত্যার হুমকি দিয়েছেন, আরেকদল কারাগার ভেঙে পালানোর পরিকল্পনা করেছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, কারাগার এখন অপরাধীদের নিরাপদ অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে, যেখানে তারা বাইরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে নির্বিঘ্নে।
এই পরিস্থিতি তৈরি হলো কীভাবে? যে সরকারের নিজের বৈধতাই নেই, যে সরকার জনগণের রায় ছাড়াই ক্ষমতায় বসেছে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, সেই সরকার রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানেই শৃঙ্খলা আনতে পারবে না। সুদখোর ইউনূসের এই অসরকারের কাছে দেশের নিরাপত্তা, আইনের শাসন কিংবা জনগণের কল্যাণ কোনোটাই অগ্রাধিকার নয়। তাদের একমাত্র লক্ষ্য যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং যারা তাদের এই অবৈধ ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের খুশি রাখা।
কারাগারে মোবাইল ফোন প্রবেশের পেছনে রয়েছে একটি সুসংগঠিত চক্র। কিছু অসাধু কারারক্ষী, কারাগার কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী বন্দীরা মিলে এই ব্যবসা চালাচ্ছে। ৫০০ টাকায় ১০-১৫ মিনিট ফোনে কথা বলা যায়। নিজের কাছে নিয়মিত ফোন রাখতে চাইলে লাগে বড় অঙ্কের টাকা। সিগারেট, পিসি কার্ডের টাকা কিংবা নগদ অর্থ দিয়ে এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। ছোট ফোন শরীরের পায়ুপথে লুকিয়ে আনা হচ্ছে, খাবার-ওষুধ-জুতা-উপহারের মধ্যে লুকিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ফোন আর সিম। এমনকি দেয়াল টপকে বল ছুড়ে মাদক আর মোবাইল ফোন পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে।
বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে কারাগারে কর্মরত নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা এই অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। কাশিমপুর কারাগারের প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অন্তত ৫০ জন বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। কিন্তু দেখার বিষয় হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? উত্তর হলো, কিছুই না। কারণ যে সরকার নিজেই অবৈধ, তারা অবৈধতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কীভাবে?
কারা মহাপরিদর্শক নিজেই স্বীকার করেছেন যে বডি স্ক্যানার নষ্ট থাকার কারণে ফোন ঢুকছে। প্রযুক্তি, জনবল, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা সব ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে তাদের। জ্যামার আধুনিকায়ন করা হয়নি, সিসি ক্যামেরা ঠিকমতো কাজ করছে না, স্ক্যানার উন্নত করা হয়নি। প্রশ্ন হলো, এই কয়েক মাসে সরকার কী করছিল? তারা কি শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হয়রানি করতে, নিরীহ মানুষদের ধরপাকড়ে ব্যস্ত ছিল? নাকি তারা বিদেশি প্রভুদের নির্দেশ পালনে এতই মগ্ন ছিল যে দেশের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের ভাবার সময় ছিল না?
কারাগার থেকেই অপরাধীরা ঢাকার ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মগবাজার, গুলশান এবং বাড্ডা এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে। বাইরে অস্ত্র ব্যবহার, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা আর মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে কারাগারের ভেতর থেকে বসে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা স্পষ্ট করেই বলেছেন, কারাগারের দুর্বল নজরদারির কারণে বাইরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়ছে। এর দায় কার? এর জন্য দায়ী ইউনূসের অবৈধ সরকার, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলেছে।
যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, যে সরকার বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত, যে সরকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের সাহায্যে এবং সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকার দেশে শৃঙ্খলা আনতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। কারাগারের এই করুণ দশা তারই প্রমাণ। ইউনূস এবং তার দোসরদের কাছে দেশের স্বার্থ গৌণ, তাদের আসল কাজ হচ্ছে যারা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের স্বার্থ রক্ষা করা। আর তাই দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারাগারগুলো এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্য।
এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়? যতদিন এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কারাগারে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ হবে না, অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। কারণ একটি অবৈধ সরকারের পক্ষে বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। যে সরকার নিজেই আইনের ধারধারে না, সেই সরকার কারাগারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে এটা ভাবাই বোকামি। ইউনূসের এই অসরকারের আসল চেহারা প্রতিদিন আরও স্পষ্ট হচ্ছে, আর কারাগারে মোবাইল ফোনের রমরমা তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

