ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে আঠারো বছরের এক ছেলে। বিস্কুট আর চিপসের লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে। শিশুটি তিন দিন পর মাকে বলতে পেরেছে কী হয়েছে তার সাথে। মা থানায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার মাতব্বররা বলেছে, থানায় যাওয়ার দরকার নেই, আমরা মীমাংসা করে দেবো।
তারপর কী হলো? গ্রামের মাতব্বর সোলেমান মিয়া তার বাড়ির সামনে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে সালিশ বসালেন। সেই সালিশে ধর্ষকের পরিবার যেমন ছিল, তেমনি ছিল ধর্ষিতা শিশুটি, তার মা আর নানি। একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা, যাকে সবে ধর্ষণ করা হয়েছে, তাকে বসিয়ে গ্রামের শতাধিক মানুষের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। তিন ঘণ্টা ধরে চলল এই তামাশা। শেষে ধর্ষককে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় মারা হলো, পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হলো, আর একটা সাদা কাগজে সবার সই নিয়ে বিচার শেষ। সোলেমান মিয়া বললেন, “শক্ত বিচার হয়েছে। আর এ রকম করবে না।”
শিশুটির মা পরিষ্কার বলেছেন, এই বিচার তিনি মানেন না। কিন্তু তার কথা শোনার কেউ নেই। কারণ মুহাম্মদ ইউনুসের অবৈধ সরকারের আমলে আইনের শাসন বলে কিছু নেই।
এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে কীভাবে? জুলাই মাসে সারা দেশে দাঙ্গা বাঁধিয়ে, মানুষ খুন করে, সম্পত্তি ধ্বংস করে। সেই দাঙ্গার পেছনে বিদেশি টাকা ছিল, জঙ্গি সংগঠনগুলোর সংগঠিত ভূমিকা ছিল, আর সামরিক বাহিনীর একাংশের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল। একটা নির্বাচিত সরকারকে ক্যু করে ফেলা হলো। তারপর ক্ষমতায় বসলেন মুহাম্মদ ইউনুস, যার নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর সুদের ব্যবসা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ আছে।
এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে কী হচ্ছে? সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে। হামলা, লুটপাট, জোর করে জমি দখল চলছে নির্বিঘ্নে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয়। পুলিশ জানে যে তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। ঈশ্বরগঞ্জের উপপরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, শিশু নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছেন, কিন্তু কী করতে পারছেন? কিছুই না। কারণ গ্রামের মাতব্বররা ইতোমধ্যে বিচার সেরে ফেলেছেন।
এখানে আসল প্রশ্ন হলো, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিচার কি গ্রামের সালিশে হতে পারে? বাংলাদেশের আইনে শিশু ধর্ষণ একটা সংজ্ঞাহীন অপরাধ, যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী এই ধরনের মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়। কিন্তু ঈশ্বরগঞ্জে হলো কী? একটা পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর অভিযুক্তকে কয়েকটা চড় মেরে ছেড়ে দেওয়া হলো।
ইউনুস সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা কোথায়? তারা কি জানেন এই ঘটনার কথা? নাকি তাদের কাছে এটা এতটাই নগণ্য ঘটনা যে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই? নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা কী করছেন? আইন উপদেষ্টা কোথায়? নাকি তারা ব্যস্ত আছেন আগের সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করতে?
এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে যে ইউনুস সরকারের অধীনে রাষ্ট্র একটা মধ্যবিত্ত কাঠামোতে পরিণত হয়েছে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা নেই। পুলিশ অসহায়। আদালত নিষ্ক্রিয়। আর গ্রামের মাতব্বররা নিজেদের মতো করে বিচার করছেন। একটা শিশু ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধেও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেই, কোনো গ্রেফতার নেই, কোনো তদন্ত নেই।
ইউনুস সরকার এসেছিল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে। বলেছিল তারা দুর্নীতি দূর করবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? একটা পাঁচ বছরের শিশুর ধর্ষকও পার পেয়ে যাচ্ছে কয়েকটা চড় খেয়ে। এটাই ইউনুসের আইনের শাসন? এটাই তার ন্যায়বিচার?
এই সরকারের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই। তারা ক্ষমতায় এসেছে সহিংসতার মাধ্যমে, টিকে আছে সামরিক সমর্থনের জোরে, আর দেশ চালাচ্ছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। তাদের আমলে একটা শিশু ধর্ষিত হওয়ার পরও বিচার পাচ্ছে না। এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে?

