মার্কো রুবিওর সাম্প্রতিক বক্তব্যে উগ্রবাদী ইসলামকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার এই সতর্কবাণী যে শুধুমাত্র তাত্ত্বিক তা নয়, বরং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখলে বোঝা যায় এই হুমকি কতটা বাস্তব এবং জরুরি।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে যে দাঙ্গা এবং সহিংসতার মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল, তার পেছনে যে শক্তিগুলো কাজ করেছে তাদের চরিত্র এবং উদ্দেশ্য এখন আর গোপন নেই। মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগী ইসলামিক উগ্রপন্থী দলগুলো যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছে এবং এরপর যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তা রুবিওর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দকে সত্য প্রমাণ করে।
যে দেশে একসময় ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা ঐতিহ্য ছিল, সেই বাংলাদেশে গত দেড় বছরে সংখ্যালঘু বিশেষ করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর যে পরিমাণ অত্যাচার এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা বিবেকবান মানুষমাত্রই স্বীকার করতে বাধ্য। চার্চে হামলা, খ্রিস্টান পাড়ায় অগ্নিসংযোগ, ধর্মীয় উৎসবে বাধা প্রদান, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা এবং প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকির ঘটনা এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়, বরং প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কো রুবিও যখন বলেন যে উগ্রবাদীরা নিজেদের সীমিত অঞ্চলে থেকে সন্তুষ্ট নয়, বরং সম্প্রসারণ চায়, তখন বাংলাদেশের বাস্তবতা তার এই কথার জ্বলন্ত উদাহরণ। জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামিক উগ্রপন্থী দলগুলো যেভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীতে তাদের লোক বসানোর চেষ্টা করছে, তা থেকে স্পষ্ট যে তাদের লক্ষ্য শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা নয়, বরং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
যে বিদেশি শক্তিগুলো এই অবৈধ ক্ষমতা দখলে সহায়তা করেছে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা জরুরি। বাংলাদেশের মতো একটি মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশকে অস্থিতিশীল করে কার লাভ হচ্ছে? কারা চাইছে যে দক্ষিণ এশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে একটি উগ্রপন্থী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে যে, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু শক্তি রয়েছে যারা বাংলাদেশকে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়।
মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একজন ব্যক্তি যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন দারিদ্র্য বিমোচনের কথিত অবদানের জন্য, তিনিই এখন দেশের সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক এবং সহিংস শক্তিগুলোর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। তার মাইক্রোক্রেডিট কর্মসূচির নামে যেভাবে গরিব মানুষদের ঋণের জালে আটকে ফেলা হয়েছিল, সেই একই কৌশল এখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। মানুষকে মিষ্টি কথা শুনিয়ে এবং উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে আসলে তাদের স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
রুবিও যখন বলেন যে উগ্রবাদীরা সন্ত্রাসবাদ, হত্যাযজ্ঞ এবং খুন-খারাবিতে প্রস্তুত, তখন বাংলাদেশের বিগত দেড় বছরের ঘটনাবলি তার প্রমাণ। কতজন নিরপরাধ মানুষ খুন হয়েছে, কতগুলো পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে, কত নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসাব এখন আর পাওয়া সম্ভব নয় কারণ সরকারি যন্ত্র এবং মিডিয়া এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। যারা প্রশ্ন তোলার সাহস দেখিয়েছে, তাদের হয় গায়েব করে দেওয়া হয়েছে অথবা জেলে পাঠানো হয়েছে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের বিষয়টি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে খ্রিস্টানরা সংখ্যায় অল্প হলেও দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সমাজসেবায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বর্তমান শাসনব্যবস্থা তাদের সেই অবদানের কোনো মূল্য দিচ্ছে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হচ্ছে যাতে তারা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। এটা শুধু ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত জাতিগত নিধনের প্রক্রিয়া।
রুবিও যে ভিসা বিধিনিষেধের কথা বলেছেন, তা একটি শুরু মাত্র। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শুধু ভিসা বিধিনিষেধ দিয়ে কি এই সমস্যার সমাধান হবে? যারা জেনেবুঝে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে, যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, যারা একটি স্বাধীন দেশকে উগ্রপন্থীদের ঘাঁটিতে পরিণত করছে, তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার হওয়া উচিত, তাদের সম্পদ জব্দ করা উচিত এবং তাদের বিদেশি মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
বাংলাদেশের জনগণ এখন একটা কঠিন সময় পার করছে। যারা স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা এখন প্রতিদিন ভয়ের মধ্যে থাকছে। কিন্তু ইতিহাস বলে যে, অন্যায় যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তার পতন অবশ্যম্ভাবী। জামায়াত এবং তাদের সহযোগীরা যে অন্যায় এবং অত্যাচার চালাচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া তাদের ভোগ করতেই হবে। হয়তো আজ নয়, কাল নয়, কিন্তু একদিন অবশ্যই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর এখন দায়িত্ব হলো শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ করা যে তারা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের পক্ষে। বাংলাদেশে যা ঘটছে তা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা পুরো অঞ্চলের এবং শেষ পর্যন্ত পুরো বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ইউনূস এবং তার সহযোগীদের যদি এখনই থামানো না যায়, তাহলে আগামীতে এই সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করবে। সময় এসেছে কথা থেকে কাজে যাওয়ার, প্রতিশ্রুতি থেকে বাস্তবায়নে যাওয়ার।

