২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াল অধ্যায়—যেখানে রাষ্ট্রের বুকে খোদ নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভেতরেই সংঘটিত হয়েছিল নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ। দেশের বীর সেনা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যা করার পর সেই ট্র্যাজেডি থেকে উত্তরণে রাষ্ট্র যে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল, তা ছিল জাতির কাছে ন্যায়বিচারের শক্ত বার্তা। আওয়ামী লীগ সরকার এই ঘটনাকে আড়াল করেনি—বরং আইনের কাছে হত্যাকারীদের দাঁড় করিয়ে রায় কার্যকর করে জাতির ক্ষত সারানোর চেষ্টা করেছে।
এক দশকেরও বেশি সময় পর, সেই বিচারপ্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিছু রাজনৈতিক শক্তি। অন্তর্বর্তী সরকারের নামে পরিচালিত ইউনুস প্রশাসনের অধীনে হঠাৎ গঠিত একটি বিতর্কিত কমিশন—জনমনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।
সমালোচকদের মতে, এই কমিশনের আসল উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার পুনর্মূল্যায়ন নয়; বরং বিডিআর বিদ্রোহকে নতুন রাজনৈতিক বর্ণনায় ঢেকে দেওয়া এবং দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপানো।
কমিশনের উদ্দেশ্য পুনর্মূল্যায়ন নয়, ইতিহাস পুনর্লিখন
হঠাৎ করে ‘পুনর্মূল্যায়ন’-এর নামে কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকরা সরাসরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। বিগত এক দশকে যে শক্তিগুলো বিডিআর বিদ্রোহের বিচারকে বারবার ‘অবৈধ’, ‘ভুল’ বা ‘রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র’ বলে প্রচার করেছে—আজ সেই একই গোষ্ঠী কমিশনকে আড়ালের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এই কমিশন এমন কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক চাপের অধীনে কাজ করছে যারা বিচারকে উল্টে দিতে চায়।
বিদ্রোহের সময়কার জঙ্গিবাদী সংযোগ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও উসকানির ছায়া আড়াল করতেই নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।
জামায়াতের রাজনৈতিক লাভের হিসাব—টাকার প্রভাবের অভিযোগ ঘিরে ঝড়
সমালোচক মহলের দাবি, এই কমিশনের আত্মপ্রকাশের পেছনে সক্রিয় সেই পুরোনো রাজনৈতিক শক্তি—যারা বিডিআর বিদ্রোহের দায় নিজেদের দিক থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এমনও অভিযোগ ছড়িয়েছে যে কমিশনের ওপর অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক প্রভাব কাজ করছে, যা জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে।
জনমতের বড় অংশ বিশ্বাস করে—এই কমিশনের অনেক সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং এর মাধ্যমে বিচারের প্রতিপক্ষরা আবার মাথা তুলছে।
ভারতবিরোধী বর্ণনা দাঁড় করানোর ব্যর্থতা
পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউনুস প্রশাসনের একটি উদ্দেশ্য ছিল বিদ্রোহের পেছনে ভারতের সম্পৃক্ততার গল্প দাঁড় করানো। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে কোনও গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় তারা সেই পথে অগ্রসর হতে পারেনি। ফলে এখন তাদের লক্ষ্য পরিবর্তিত— ভারত নয়, সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করা। এভাবে রাজনৈতিক বাস্তবতা পাল্টানোর প্রচেষ্টা চলছে বলে সমালোচকরা মনে করেন।
ন্যায়বিচারকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা—বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ছিল জাতির ক্ষত–প্রশমন। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার পরিবার যে ন্যায়বিচার পেয়েছিল—সেটিকে আজ নতুন রাজনৈতিক লেনদেনে পরিণত করার চেষ্টা মানুষ কখনও গ্রহণ করবে না।
যারা আজ বিভ্রান্তিকর বয়ান দাঁড় করিয়ে ইতিহাস ধ্বংস করতে চাইছে—তারা ভুলে গেছে, বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ছিল রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্ত প্রতিরোধ। সেই ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।

